ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভোট গ্রহণ শেষে আনন্দমিছিলে গুলি, ছাত্রলীগ কর্মী নিহত
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের আনন্দমিছিলে গুলি করা হয়। এতে ওই চেয়ারম্যার প্রার্থীর এক তরুণ সমর্থক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ওই চেয়ারম্যান প্রার্থীর অপর এক সমর্থকের গুলিতে তিনি নিহত হয়েছেন বলে তাঁর স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন। আজ বুধবার বিকেল সাড়ে ছয়টার দিকে জেলা শহরের কলেজপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ওই তরুণেরে নাম আশরাফুর রহমান (২৩)। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কলেজপাড়ার আমিনুর রহমানের ছেলে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের স্নাতক (সম্মান) উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী এবং সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভনের পক্ষের কর্মী ছিলেন। যাঁর বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি হাসান আল ফারাবী।
নিহত তরুণের পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বিকেলে জেলা শহরের খ্রিষ্টিয়ান মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ওই কেন্দ্রের ফলাফলে আনারস প্রতীকের প্রার্থী এগিয়ে ছিলেন। ওই ফলাফল জানার পর বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে আনারস প্রতীকের প্রার্থীর কয়েক শ কর্মী-সমর্থক জেলা শহরের কলেজপাড়া এলাকায় আনন্দমিছিল বের করেন। মিছিল নিয়ে তাঁরা কলেজপাড়ার খান টাওয়ার এলাকায় যান।
বিকেল ছয়টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি জালাল হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকটি মোটরসাইকেলে আনারস প্রতীকের বেশ কিছু সমর্থক খান টাওয়ার এলাকায় পৌঁছান। তখন মোটরসাইকেল আরোহীদের একজন আনন্দমিছিল লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে মিছিলে থাকা আশরাফুর রহমান ওরফে ইজাজ গুলিবিদ্ধ হন। আনুমানিক সাড়ে ছয়টার দিকে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. আরিফুজ্জামান তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন।
চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশরাফুর রহমানের বা কানের ওপরে গুরুতর জখম ছিল। আমার কাছে মনে হয়েছে সে গুলিবিদ্ধ হয়েছে।’
স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যা সাতটার পর থেকে প্রতিপক্ষের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালাচ্ছেন নিহত তরুণের সমর্থকেরা।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি জালাল হোসেন খোকা কলেজপাড়ায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। তাঁর বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
নিহত আয়াশ আহমেদের চাচাতো ভাই জুনায়েদ চৌধুরী বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতা হাসান আল ফারাবী (জয়) একটি বন্দুক হাতে তোলেন। আমার সঙ্গে আমার চাচাতো ভাই দাঁড়িয়ে ছিল। তার মাথায় বাঁ দিক দিয়ে গুলি করে জয়। তখন আশরাফুর রহমান মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আমরা তাকে আহতাবস্থায় প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। চিকিৎসক তাকে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, জালাল হোসেনের নির্দেশে জয় তাঁর চাচাতো ভাইকে গুলি করেছে।
আশরাফুর রহমানকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য ছাত্রলীগ নেতা হাসান আল ফারাবীর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আনারস প্রতীকের প্রার্থী শাহাদাৎ হোসেনের মুঠোফোনে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে জেলার গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি জানান, দুটি পক্ষই তাঁর অনুসারী। নির্বাচনীয় কোনো বিষয়কে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেনি।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নিহত তরুণ ছাত্রলীগের কর্মী। তবে ছাত্রলীগের কোনো ঘটনা বা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটেনি। কলেজপাড়ার উত্তর দিক এবং ডিসি বাংলোর দক্ষিণ দিকের দুটি পক্ষের মধ্যে পূর্ব থেকেই দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে।
ঘটনাস্থলে কথা হয় সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম হোসেনের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কলেজপাড়া এলাকায় এক বা একাধিক যুবক মিলে একজনকে গুলি করেছে। তাদের মধ্যে আগে থেকে শত্রুতা বা পূর্ববিরোধ ছিল। পূর্ববিরোধের জের ধরে আজকের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। তবে যারা গুলি করেছে এবং যে গুলিবিদ্ধ হয়েছে, তারা একই পক্ষের।