কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর পশ্চিম বাজারে যুবলীগ নেতাকে গুলি করে হত্যায় অংশ নেয় বোরকা পরা তিন দুর্বৃত্ত। তারা বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যুবলীগ নেতা জামাল হোসেনকে পর পর তিনটি গুলি করে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে এমনটাই জানিয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা।
গতকাল রোববার রাত ৮টার দিকে গৌরীপুর পশ্চিম বাজার ঈদগাহ এলাকায় যুবলীগ নেতা জামাল হোসেনকে (৪০) গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি কুমিল্লার তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। জামাল হোসেন তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি নোয়াগাঁও গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে। তিনি গৌরীপুর পশ্চিম বাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।
এ ঘটনায় আজ সোমবার বেলা ১১টা পর্যন্ত মামলা হয়নি। পুলিশ জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি। আজ সকালে সরেজমিন দেখা যায়, র্যাব, গোয়ান্দা পুলিশ (ডিবি), জেলা পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলছেন। গৌরীপুর বাজারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সদস্য অবস্থান করছেন। বাজারের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজনের বরাত দিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্তসংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, জামাল হোসেন গতকাল রাত সোয়া আটটার দিকে গৌরীপুর পশ্চিম বাজার এলাকার বাসার সামনে একা দাঁড়িয়ে ছিলেন। পশ্চিম দিক থেকে বোরকা পরা দুর্বৃত্তরা আসে। একজন এসে দাঁড়িয়ে থাকা জামাল হোসেনকে প্রথমে ধাক্কা দেয়। এ সময় জামাল এক দুর্বৃত্তকে ঝাপটে ধরেন। তখন আরেকজন এসে লাথি মেরে জামালকে মাটিতে ফেলে দেয়। এরপর দুর্বৃত্তরা পর পর তিনটি গুলি করে পশ্চিম দিক দিয়ে পালিয়ে যায়।
ঘটনাস্থলের পাশের একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, অস্ত্রধারীরা হেঁটে বোরকা পরে মসজিদ থেকে পূর্বদিকে জামাল হোসেনের ভাড়া বাসার দিকে যাচ্ছেন। সিসি ক্যামেরার থাকা সময় অনুযায়ী, তখন সন্ধ্যা সাতটা ৪৪ মিনিট। এর এক মিনিট ২০ সেকেন্ডের মাথায় একই পথ ধরে ওই তিন দুর্বৃত্ত দৌড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় একজনের মুখের আবরণ খুলে যায়। আরেকজনের হাত থেকে অস্ত্র পড়ে যায়। অস্ত্রটি কুড়িয়ে নিয়ে তারা পালিয়ে যায়।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কুমিল্লার উপপরিদর্শক সামছুদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে ভিডিও ফুটেজের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পুলিশ বলছে, ওই এলাকায় অন্তত ৫০টির মতো সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। ফুটেজে হত্যায় অংশগ্রহণকারীদের দেখা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গুলির শব্দ পেয়ে অনেকে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। আহত জামাল হোসেনকে দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মোয়াজ্জেম আহমেদ তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে স্বজনেরা শেষ চেষ্টা হিসেবে জামাল হোসেনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
দাউদকান্দি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ আলমগীর ভূঞা এবং গৌরীপুর পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গুলিতে যুবলীগ নেতা জামাল হোসেনের নিহত হওয়ার ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। তবে খুনিদের শনাক্ত করতে এবং ধরতে পুলিশের একাধিক দল মাঠে কাজ করছে। পাশাপাশি ডিবি ও র্যাব কাজ করছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, জামাল হোসেন গৌরীপুর বাজারে ব্যবসা করতেন। কয়েক বছর আগে গৌরীপুর মোড়ে খুন হওয়া আওয়ামী লীগ নেতা মনির হোসেনের অনুসারী ছিলেন জামাল হোসেন। তিতাস উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের বিবদমান পক্ষগুলোর দ্বন্দ্বের জেরে ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তিনি খুন হয়েছেন বলে ব্যবসায়ীরা মনে করেন।
কুমিল্লা উত্তর জেলা যুবলীগের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার বাবু বলেন, কোনো হত্যাকাণ্ডই রাজনৈতিক সুফল বয়ে আনে না। তাঁরা একসঙ্গে রাজনীতি করেছেন। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চান। ঢাকায় লাশের ময়নাতদন্ত করার পর এলাকায় নিয়ে আসা হবে।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফজল হোসেন আজ সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। তিনি বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।