শিক্ষার্থী নগণ্য, ফলাফলও শূন্য
গুণগত মানের শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে দুই দশক আগে ঠাকুরগাঁও কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করে জেলা প্রশাসন। প্রথমে স্কুল পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম চললেও পরে সেটি কলেজে উন্নীত করা হয়। জেলা প্রশাসনের নজরদারিতেই চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় প্রতিষ্ঠানটি থেকে মাত্র একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু কেউ পাস করতে পারেননি।
কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের মতো ঠাকুরগাঁও থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় আরও চারটি প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করতে পারেননি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চারটি হলো সদর উপজেলার কদমরসুল হাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রানীশংকৈল উপজেলার গোগর কলেজ, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার রত্নাই বগুলাবাড়ি হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং মোড়লহাট জনতা স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ছিলেন নগণ্য, ফলাফলও শূন্য।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি ছুটি থাকলেও মূল ফটকের পকেট দরজা খোলা। কলেজে ঢুকতেই একটি শ্রেণিকক্ষ থেকে শিশুদের কোলাহল ভেসে এল। কাছে যেতেই দুলাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি বেরিয়ে এলেন। জানালেন, তিনি প্রতিষ্ঠানটির গণিতের শিক্ষক। পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের গণিত বিষয়ে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন।
কালেক্টরেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোতালেব হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৪ সালে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে কালেক্টরেট পাবলিক স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে কবে কলেজ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে, তা তিনি জানেন না। মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রায় ৯০০ শিক্ষার্থী আছে। পরীক্ষায় ফলাফলও বেশ ভালো।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির একটি সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে বিদ্যালয়টি কলেজ পর্যায়ে উন্নীত হয়। ২০২১ সালে ৯ জন শিক্ষার্থী নিয়ে কলেজ পর্যায়ের কার্যক্রম শুরু হয়। তখন শিক্ষক ছিলেন পাঁচজন। পরে সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। এরপর চার শিক্ষক কলেজ ছেড়ে চলে যান। একজন এখনো খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে বিদ্যালয়ে পাঠদান করছেন। ২০২৩ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি থেকে তিনজন অংশ নিয়ে একজন পাস করেছিলেন। এবার একজন পরীক্ষা দিলেও তিনি পাস করতে পারেননি।
সদর উপজেলার কদমরসুল হাট স্কুল ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ২০১৪ সালে কলেজে উন্নীত হয়। কলেজ পর্যায়ে শিক্ষক আছেন আটজন, তবে কেউই এমপিওভুক্ত নন। এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় দুজন পরীক্ষার্থী অংশ নিলেও কেউ পাস করতে পারেননি। গত বছর চারজন পরীক্ষায় দিলেও ফলাফল ছিল শূন্য।
কদমরসুল হাট গ্রামের বাসিন্দা আবদুল করিম বলেন, কেবল সরকারি সুবিধা নেওয়ার জন্য কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এখানে নিয়মিত লেখাপড়া হয় কি না, যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কলেজের অধ্যক্ষ মো. আনোয়ার হোসেনের দাবি, এখানে দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েরা ভর্তি হয়। কলেজে ভর্তি হলেও অনেকেই পরীক্ষা দেয় না। যাঁরা এবার পরীক্ষা দিয়েছিলেন, তাঁরা পড়ালেখার মধ্যে ছিলেন না। ফলে পাস করতে পারেননি।
রানীশংকৈল উপজেলার গোগর কলেজ থেকে এবার ছয়জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছিলেন, কিন্তু কেউ পাস করতে পারেননি। ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ১৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিলেও কেউ পাস করতে পারেননি। কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম জানান, কলেজটি ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৪ জন শিক্ষক আছেন, কিন্তু এখনো এমপিওভুক্ত হননি। কলেজটি ২০০৪ সাল থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে আসছে। এখানে যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হয়, তারা পড়াশোনায় অনিয়মিত। শিক্ষকেরা চেষ্টা করেও নিয়মিত করতে পারেননি। এ জন্য এমন ফলাফল হয়েছে।
একইভাবে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার রত্নাই বগুলাবাড়ী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে তিনজন এবং মোড়লহাট জনতা স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে দুজন পরীক্ষার্থী অংশ নিলেও কেউ পাস করেননি। এর আগে গত বছর মোড়লহাট থেকে পাঁচজন পরীক্ষা দিলেও কেউ উত্তীর্ণ হননি।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের রংপুরের সাবেক উপপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পর পাঠদানের সরকারি অনুমোদন নেন। পরে তাঁরা যেনতেনভাবে পাঠ চালিয়ে এমপিওভুক্তির চেষ্টা চালাতে থাকেন। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীও কম, পাঠদানও অনিয়মিত। এ জন্য ফলাফলও খারাপ হয়।
ঠাকুরগাঁও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার শাহীন আকতার প্রথম আলোকে বলেন, এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় জেলার পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হতে পারেননি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া উচিত।