বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঢালের মাটি ভাটায়

আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী গ্রামের একটি অবৈধ ইটভাটায় বাঁধের ঢালের মাটি সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে বাঁধটি হুমকির মুখে পড়েছে।

বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশ থেকে ইট তৈরির জন্য এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছেন ইটভাটার মালিক। গত মঙ্গলবার বরগুনার আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী গ্রামেছবি: প্রথম আলো

বরগুনার আমতলী উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঢাল থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে। সেখানে ওই মাটি পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে ইট। ওই অবৈধ ইটভাটা উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের গুলিশাখালী গ্রামে। ঢাল থেকে এভাবে মাটি কেটে নেওয়ায় বাঁধটি ঝুঁকিতে আছে। এখনই মাটি কাটা বন্ধ না করলে বাঁধের ওই অংশ ভেঙে উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আইন লঙ্ঘন করে এভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশ থেকে মাটি কেটে নেওয়া হলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ ছাড়া এই ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের লাইসেন্স—এগুলো কিছুই নেই।

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন–২০১০–এর ৪–এর খ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনার এক কিলোমিটারের মধ্য থেকে বালু বা মাটি তোলা যাবে না। কিন্তু এই আইন লঙ্ঘন করে নুর উদ্দিন ও তাঁর লোকজন গুলিশাখালী গ্রামের বাঁধের পাশ থেকে মাটি কেটে নিয়ে তা দিয়ে ইট তৈরি করছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে গুলিশাখালী গ্রামে এনবিএম নামের ওই ইটভাটা স্থাপন করেন নুরউদ্দিন। ওই ইটভাটার পশ্চিম পাশে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। ওই বাঁধের ঢালের মাটি কেটে ভাটার মালিক নুর উদ্দিন ও তাঁর লোকজন ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছেন। এতে জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে গেলে লোকালয়ে পানি ঢুকে ইউনিয়নের ৩০ হাজার পরিবারের ফসলি জমি প্লাবিত হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইটভাটার তিন পাশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওই ইটভাটার চিমনি থেকে বের হওয়া ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এলাকাবাসী বাঁধের পাশ থেকে মাটি কাটার প্রতিবাদ করায় নুর উদ্দিন ও তাঁর লোকজন তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। মামলার ভয়ে তাঁরা প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না। ১৫ দিন ধরে ওই স্থান থেকে মাটি কাটা হচ্ছে।

এ বিষয়ে এনবিএম ইটভাটার মালিক নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাঁধের পাশ থেকে কোনো মাটি কাটা হচ্ছে না। ওই খানে আমাদের আগে থেকে মাটি স্তূপ করে রাখা ছিল। সেই মাটি আমরা এখন সেখান থেকে এনে ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করছি।’     

ইটভাটার পাশের গুলিশাখালী গ্রামের বাসিন্দা ঝরনা, আসমাসহ কয়েকজন বলেন, বাঁধের মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতে বাঁধটি দুর্বল হয়ে গেছে। বন্যা বা জলোচ্ছ্বাস হলে ওই বাঁধ ভেঙে পানিতে এলাকা তলিয়ে যাবে। তাঁরা আরও বলেন, ‘ওই ইটভাটার কারণে আমরা অত্যন্ত ঝুঁকিতে বসবাস করছি।  গাছপালা ও বসতবাড়িতে ইটভাটার ধুলার আস্তরণ পড়েছে।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরগুনা কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী আজিজুর রহমান বলেন, ইটভাটার মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশালের উপপরিচালক এইচ এম রাশেদ বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসংলগ্ন এলাকায় ইটভাটা নির্মাণ করায় এনবিএম নামের ওই ইটভাটার ছাড়পত্র বাতিল করা হয়েছে।