এক বছর আগে অভিযোগপত্র দিলেও শুরু হয়নি কুমিল্লায় জোড়া খুনের বিচার

নিহত সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেল (বাঁয়ে) ও হরিপদ সাহা
ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেল (৫০) ও তাঁর অনুসারী হরিপদ সাহাকে (৫৫) এলোপাতাড়ি গুলি করে খুনের ঘটনার তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ শুক্রবার ২২ নভেম্বর।

দেশজুড়ে আলোচিত এই জোড়া খুনের ঘটনায় করা মামলায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) তদন্ত কর্মকর্তা। তবে এখনো শুরু হয়নি বিচারপ্রক্রিয়া। নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা এখন বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন। দেখতে চান, খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের রায়।

২০২১ সালের ২২ নভেম্বর বিকেলে কুমিল্লা নগরের পাথরিয়াপাড়া এলাকায় থ্রি স্টার এন্টারপ্রাইজ নামে কাউন্সিলরের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন তৎকালীন কাউন্সিলর সোহেল ও তাঁর অনুসারী হরিপদ সাহা। কাউন্সিলর সোহেল কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য এবং ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। নিহত হরিপদ সাহা নগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাহাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।

এই জোড়া হত্যাকাণ্ডের পরদিন ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর রাতে কাউন্সিলর সোহেলের ছোট ভাই সৈয়দ মো. রুমন বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৮ থেকে ১০ জনের বিরুদ্ধে কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক শরীফ ইবনে আলম মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছিলেন। এতে এজাহারভুক্ত ছয় আসামি ও তদন্তে পাওয়া আরও পাঁচ আসামিকে অভিযুক্ত করা হয়। ওই অভিযোগপত্রে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত তিনজনসহ এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামিকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়।

অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হচ্ছেন নগরের নবগ্রাম বউবাজার এলাকার সোহেল ওরফে জেল সোহেল, সুজানগরের মো. আলম, জিসান মিয়া, সংরাইশের মাসুম, নবগ্রামের সায়মন উদ্দিন, সুজানগরের রনি, সংরাইশের রাব্বী ইসলাম ওরফে অন্তু, সুজানগরের এমরান খন্দকার, পাথুরিয়াপাড়ার জাহিদুল হাসান ওরফে ইমরান, পূর্ব চানপুরের নাজিম উদ্দিন ও চৌদ্দগ্রামের চাঁপাচৌ গ্রামের ইমরান হোসেন ওরফে রিশাত। আসামিদের মধ্যে রাব্বী ইসলাম ওরফে অন্তু, এমরান খন্দকার, জাহিদুল হাসান ওরফে ইমরান, নাজিম ও ইমরান হোসেনসহ পাঁচজনের নাম এজাহারে ছিল না। তদন্তকালে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাঁদের এ মামলায় অভিযুক্ত করা হয় বলে উল্লেখ করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

এ ছাড়া এই মামলার তদন্তকালে এজাহারভুক্ত আসামি নগরের সুজানগর এলাকার শাহ আলম, মো. সাব্বির হোসেন ও সংরাইশ এলাকার মো. সাজন পৃথক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। এ ছাড়া মামলার তদন্তে মামলার আসামি সুজানগরের সুমন ও তেলিকোনার আশিকুর রহমানের সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাঁদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

কাউন্সিলর সোহেলের ছোট ভাই ও মামলার বাদী সৈয়দ মো. রুমন গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁদের নাম অভিযোগপত্রে এসেছে, তাঁরা হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়িত করেছে; কিন্তু  মূল হোতাদের নাম অভিযোগপত্রে আসেনি। এর পরও আমরা চেয়েছি, খুনিদের বিচার হোক। কিলিং মিশন যারা বাস্তবায়ন করেছে, তাদের নাম অভিযোগপত্রে আসায় আমরা অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন করিনি; কিন্তু এক বছর তিন মাসের বেশি সময় হলেও এখনো বিচারই শুরু হয়নি। আমরা চাই, দ্রুতবিচার কার্যক্রম শুরু হোক। মামলার আসামিরা জামিনে আছে। আমরা তাদের ফাঁসি চাই।’

জানতে চাইলে কুমিল্লা আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) কাইমুল হক বলেন, ‘আলোচিত এই জোড়া খুনের পেছনে রাজনৈতিক কারণও ছিল। আদালতে অভিযোগপত্র গৃহীত হয়েছে। আমরা চেষ্টা করব, দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচারকাজ শুরু হওয়ার।’

এদিকে গত বছর আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রে হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, এ মামলার আসামি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত শাহ আলম একজন বড় মাদক ব্যবসায়ী এবং তাঁর নামে অনেক মামলা ছিল। কাউন্সিলর সোহেল, শাহ আলমের মাদক ব্যবসায় বাধা হয়ে দাঁড়ালে শাহ আলমের সঙ্গে কাউন্সিলরের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া শাহ আলমের সহযোগী ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত সাব্বিরের সঙ্গে স্থানীয় এক মেয়ের প্রেমঘটিত বিষয় নিয়েও বাধা হয়ে দাঁড়ান কাউন্সিলর সোহেল। মূলত সোহেলের কারণে খুনিরা এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতে পারছিলেন না। এতে তাঁরা কাউন্সিলর সোহেলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। কাউন্সিলর হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র, গুলি ও বিস্ফোরক দ্রব্যের জোগানদাতা এবং অর্থের বিনিময়ে খুনিদের ভাড়া করে আনেন বন্দুকযুদ্ধে নিহত অস্ত্র-মাদক ব্যবসায়ী শাহ আলম।