মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ডের পর পঞ্চগড়ে ঝলমলে রোদ
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় আজ রোববার সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা চলতি মৌসুমে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড। এ নিয়ে টানা তিন দিন ধরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে তেঁতুলিয়ায়। তবে সকাল থেকে ঝলমলে রোদের দেখা মেলায় কিছুটা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন বাসিন্দারা।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৫ শতাংশ। সকাল ছয়টায় তাপমাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত শুক্রবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এই মৌসুমের শুধু নয়, ২০২০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড। আকাশে মেঘ আর কুয়াশার পরিমাণ কমে যাওয়ায় সকাল সকাল ঝলমলে রোদ উঠেছে। এতে কিছুটা স্বস্তি মিলেছে। তবে উত্তরের হিমেল বাতাস অব্যাহত থাকায় রোদের মধ্যেও কিছুটা শীত অনুভূত হচ্ছে।
তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেখানে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ থাকে বলে গণ্য করা হয়। তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে, তা হয় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। সে অনুযায়ী, আজ পঞ্চগড়ে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বইছে। কিন্তু আবহাওয়া অধিদপ্তর একে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলছে না। কারণ হিসেবে অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরপর দুই দিন তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে সে সময় তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু আমাদের পূর্বাভাস বলছে, আগামীকাল সোমবার আবার তাপমাত্রা বেড়ে যাবে। তাই এখনই এটাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হচ্ছে না।’
গত মঙ্গলবার থেকে তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকেই বাড়তে থাকে উত্তরের হিমেল বাতাসের দাপট। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে বাড়তে থাকে কুয়াশাও। ঘন কুয়াশার কারণে সকালে সড়কে যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে দেখা গেছে। গায়ে শীতের পোশাক জড়িয়ে কাজে যেতে দেখা গেছে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষদের। আবার সকালে কেউ কেউ খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করেছেন।
এদিকে তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এলেও জেলার সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান চালু থাকতে দেখা গেছে। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
বেলা ১১টার দিকে পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খায়রুল আনাম মো. আফতাবুর রহমান হেলালী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রাখার কোনো নির্দেশনা পাননি। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এসেছে, পাঠদান অব্যাহত আছে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল মালেক বলেন, তাপমাত্রা কম রেকর্ড করা হলেও সকাল সকাল রোদ ওঠায় আবহাওয়া কিছুটা স্বাভাবিকই মনে হচ্ছে। দিনের বেলা ঝলমলে রোদ থাকায় শ্রেণি পাঠদান বন্ধের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এর আগে টানা তিন দিন শ্রেণি পাঠদান বন্ধের সঙ্গে শুক্র ও শনিবার থাকায় টানা পাঁচ দিনই পাঠদান বন্ধ ছিল।
সকাল ৯টার দিকে পঞ্চগড় সদর উপজেলার শিংপাড়া এলাকায় কথা হয় ব্যাটারিচালিত ভ্যানচালক আবুল হোসেনের (৪৩) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আইজ সারা রাতি খুপে (খুব) ঠান্ডা কইছে (করেছে)। বিছানাখানোত যেই পাশোত উল্টেছু ওই পাশোতে ঠান্ডা নাগেছে। সকালে ভ্যান নিয়া বাইর হওয়ার পর হাতপাওলা পটপটাছে। এ্যালা (এখন) কনেক (একটু) রোদখান উঠে ভাল নাগেছে।’
নির্মাণশ্রমিক ইদ্রিস আলী বলেন, ‘ভোরে যেই ঠান্ডাখান ছিল, ওই ঠান্ডাখান দিনোতো রহিলে (থাকলে) কাজকাম করা গেলনাইহয় (যেত না)। রোদখান উঠে হামরা গরিব লোকলা আরাম পাছি। কামকাজ করিবা পাচ্ছি।’