রাজশাহীতে নিখোঁজের ১৬ দিন পর স্কুলছাত্রের লাশ উদ্ধার
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রেজোয়ান ইসলাম। বাবা বাবু ইসলাম অটোরিকশাচালক। দুপুরে বাসায় এসে বাবা বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। রোজার ছুটির কারণে রেজোয়ানের স্কুল বন্ধ ছিল। সে বাবার রিকশা নিয়ে বের হয়েছিল। এক প্রতিবেশী তাকে গোদাগাড়ীর কাঁকনহাটে যাওয়ার কথা বলে নিয়ে যায়। ২৩ মার্চ বিকেলের ঘটনা এটি। এর পর থেকে সে আর বাড়ি ফিরে আসেনি। অটোরিকশাও পাওয়া যায়নি।
ঘটনার ১৬ দিন পর আজ মঙ্গলবার বিকেলে সেই যাত্রীর দেখানো নগরের তালপুকুর মহল্লার একটি অব্যবহৃত ঘর থেকে রেজোয়ানের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। এটি একটি প্লটের তত্ত্বাবধায়কের থাকার জন্য নির্মিত তালাবদ্ধ ঘর। রেজোয়ান ইসলামের বাড়ি রাজশাহী নগরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ঠাকুরমারা মহল্লার লিলি হল মোড়ে। এই ঘটনায় পুলিশ পাঁচজনকে আটক করেছে। তাঁরা হলেন একই মহল্লার পাপ্পু (২২) ও তাঁর ভাই পিয়াস (২০), পবার হরিপুর এলাকার রাসেল (৪০), মানিক (২২) ও রিপন (২৪)।
রেজোয়ান ইসলামের বড় চাচা রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, স্কুল ছুটি থাকলে রেজোয়ান বাবার রিকশা নিয়ে ভাড়া মারতে যেত। তখন রোজার সময়। তার স্কুল ছুটি ছিল। ছেলেও রোজা ছিল। প্রতিবেশী পাপ্পু এসে রেজোয়ানকে কাঁকনহাট যাওয়ার কথা বলে ফুসলিয়ে নিয়ে যান। বলেন, ওখানে তাঁর পাঁচটা ছাগল আছে। নিয়েই চলে আসবেন। কিন্তু রেজোয়ানের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। রাতেও সে ফিরে না এলে স্বজনেরা তাকে খুঁজতে বের হন। খুঁজতে খুঁজতে দারুশা এলাকায় গেলে পরিচিত একজন লোক স্বজনদের জানান, তিনি ওই এলাকায় পাপ্পুর সঙ্গে রেজোয়ানকে ইফতার করতে দেখেছেন। পরের দিনই তাঁরা পাপ্পুকে ধরে পুলিশে দেন। ওই দিন রাতেই তাঁর শ্বশুরবাড়ি থেকে অটোরিকশা উদ্ধার করা করা হয়।
তবে এ ঘটনায় করা মামলার কোনো অগ্রগতি হচ্ছিল না। পাওয়া যাচ্ছিল না রেজোয়ানকেও। এর প্রতিবাদে ঠাকুরমারা মহল্লার লিলি হলের মোড়ে মানববন্ধন করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরাই সব আসামিকে ধরে পুলিশে দিয়েছেন। পলাতক আছেন আরও আসামি। রেজোয়ানের চাচা রফিকুল বলেন, গত সোমবার পুলিশ পাপ্পুকে রিমান্ডে নিয়ে আসে। রিমান্ডে তাঁর দেওয়া তথ্যে মঙ্গলবার বিকেলে রেজোয়ানের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশের চোখমুখ থেঁতলানো। পচা গন্ধ বের হচ্ছিল।
লাশ উদ্ধারে পর আহাজারি করে রেজোয়ানের মামাতো বোন বিথী বলছিলেন, ‘আমার ভাই কারও কাছে কোনো দোষ করেনি। কখনো অন্যায় করেনি। আজ ১৬ দিন। আমার ভাইয়ের লাশ পচে গন্ধ বের হচ্ছে। আমার ভাইকে যেরকম নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে, সেরকমভাবেই আমরা সবগুলান খুনির ফাঁসি চাই।’
লাশ উদ্ধারের পর নিহত রেজোয়ান ইসলামের স্বজনেরা মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর আসামি পাপ্পুর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।
নগরের দামকুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, এই মামলায় মোট পাঁচজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২৪ মার্চ দিবাগত রাতেই ছেলের বাবা অভিযোগ দিয়েছেন। তাঁরা মূল আসামি পাপ্পুকে ধরে নিয়েই থানায় অভিযোগ দিতে এসেছিলেন। ওই লোকটাই ঘরটা দেখিয়ে দিয়েছেন। পরে ওই ঘর থেকে লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওসি বলেন, আসামিরা মূলত অটোরিকশার ব্যাটারির জন্যই ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। আসামিরা একই এলাকার লোক। পরিচিত। চিনে ফেলবে তাই ব্যাটারি নেওয়ার পর ওই কিশোরকে হত্যা করেছে বলেই প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।