লালমনিরহাট ও সাভারের সাবেক সংসদ সদস্যসহ ২০৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

মামলাপ্রতীকী ছবি

ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় মো. সুজন ইসলাম (২৫) ও সাব্বির ইসলামের (৪৪) নিহতের ঘটনায় পৃথক দুটি হত্যা মামলা হয়েছে। আশুলিয়া থানায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে নিহত সুজনের বাবা মো. সহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম) আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. মোতাহার হোসেনসহ আওয়ামী লীগের ১২৮ নেতা–কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

অপর মামলাটি করেছেন নিহত সাব্বিরের মেয়ে লিজা আক্তার (২০)। এ মামলায় ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. সাইফুল ইসলামসহ আওয়ামী লীগের ৭৬ নেতা–কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

নিহত সুজন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের পশ্চিম সারডুবি এলাকার বাসিন্দা। হাতীবান্ধা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় ওই সময়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হুমকির কারণে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় মামাতো ভাইয়ের ভাড়া বাসায় আশ্রয় নিয়ে ৫ আগস্ট বাইপাইলের আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন।

সাব্বির নেত্রকোনার আটপাড়া থানার বানিয়াজান এলাকার শুক্কুর আলীর ছেলে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বর্তমানে গাজীপুরের সারদাগঞ্জ এলাকায় বসবাস করছিলেন। তিনি আশুলিয়ার বুড়ির বাজার এলাকায় তেলের মিলে চাকরি করতেন।

সহিদুলের করা মামলায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. মোতাহার হোসেন, লালমনিরহাট-৩ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মতিয়ার রহমান, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সফুরা বেগম, হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন, পাটগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন, হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা জামাল, হাতীবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান, হাতীবান্ধার পশ্চিম বেজ গ্রামের মো. সেলিম হোসেন, উপজেলার বড়খাতা এলাকার আলমগীর হোসেন, কবির হোসেন, দিলীপ কুমার, লালমনিরহাট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাশেদ জামান, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুমন খান, আমিনুল খান, সুলতান আহমেদ, মো. স্বাধীনকে এ হত্যা মামলায় পরিকল্পনা করার অভিযোগে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া মামলায় আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন ভূঁইয়া, সাভার উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন খান, আশুলিয়া থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কবীর সরকার, শাজাহান মণ্ডল, এনামুল হক মুন্সি , মুঞ্জ দেওয়ান, মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, মোতালেব ব্যাপারী, শাহাবুদ্দিন মাদবরসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের মোট ১২৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১০০-২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, সুজন গত জুন ও জুলাই মাসে হাতীবান্ধা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। এ কারণে ১-১৬ নম্বর আসামি আন্দোলন বন্ধে তাঁকে চাপ দেন এবং মাহমুদুল হাসানের বাসায় যোগসাজশ ও শলাপরামর্শ করেন। তাঁদের ভয় ও চাপে সুজন গত ৩০ জুলাই হাতীবান্ধা থেকে আশুলিয়ার বাইপাইলে মামাতো ভাই গোলাম মোস্তফার ভাড়া বাসায় চলে আসেন। সেখানে অবস্থানকালে ৫ আগস্ট সকালে বাইপাইল এলাকায় চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। এ সময় আগ্নেয়াস্ত্র, পিস্তল, লোহার রড, বাঁশ, হকিস্টিক, লাঠিসোঁটাসহ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মামলায় উল্লেখিত আসামিরা সেখানে পৌঁছে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালান। আসামিরা ঘটনাস্থলে থাকা সুজনকে মাথায় গুলি করেন। গুলি কানের এক পাশ দিয়ে ঢুকে মাথার খুলির মাঝখান দিয়ে বের হয়ে যায়। এরপর আসামিরা একইভাবে আরও প্রাণহানি ঘটিয়ে পালিয়ে যান।

এদিকে লিজার করা মামলায় আসামিদের মধ্যে রয়েছেন মামলায় সাভারের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ও আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম, আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য রাজন ভূঁইয়া, শাহাবুদ্দিন মাদবর, ইয়ারপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন ভূঁইয়া আতাউর রহমান, এনামুল হক মুন্সি, সাদেক ভূঁইয়া, রাজু দেওয়ান, মোশাররফ হোসেন, হাসান কবির, মীলন মীর, আরিফ মাদবর, সানি ভূঁইয়া, উজ্জ্বল ভূঁইয়া, হেলাল মাদবরসহ নামীয় ৭৬ জন। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়, ৫ আগস্ট সাব্বির ইসলাম বাসা থেকে কাজের উদ্দেশ্যে বের হন। বেলা দুইটার দিকে পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন, আশুলিয়ার বাইপাইল মোড়ে করিম সুপারমার্কেটের সামনে তাঁর মরদেহ পড়ে আছে। পরে পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সাব্বিরের মাথার পেছনের দিকে গুলিবিদ্ধ ও মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পরে তাঁর লাশ নেত্রকোনায় গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, খোঁজ নিয়ে নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন, মামলায় উল্লেখিত ১ থেকে ১০ নম্বর আসামিদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সবার ওপর হামলা চালান। পালানোর চেষ্টা করলে তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি চালান হামলাকারীরা। ওই সময় গুলিতে সাব্বির ইসলাম নিহত হন।

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এফ এম সায়েদ বলেন, গতকাল মঙ্গলবার দুটি পৃথক হত্যা মামলা হয়েছে। এ দুটি মামলায় ২০৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে।