চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা, হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগীর চাপ

ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শিশুদের হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আজ বেলা ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালেছবি: প্রথম আলো

চুয়াডাঙ্গায় আজ বৃহস্পতিবার সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। গোপালগঞ্জ জেলাতেও একই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আজ সকাল ৯টার দিকে এ তথ্য জানিয়েছে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার। এরই মধ্যে জেলায় ঠান্ডাজনিত রোগীর চাপ বেড়েছে হাসপাতালগুলোয়।

৪ ডিসেম্বর থেকে টানা ৯ দিন জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ২ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করেছে। চুয়াডাঙ্গার আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আগামীকাল শুক্রবার তাপমাত্রা আরও ১ ডিগ্রি কমে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে।

এদিকে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনজীবন অনেকটাই থমকে গেছে। মানুষের স্বাভাবিক কার্যক্রম অনেকটাই ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে। সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোয় প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর চাপ।

আজ সকাল ১০টায় সদর হাসপাতালের ১৫ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে অন্তত ৫০ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিল। এ ছাড়া ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ৬০ জন রোগীর মধ্যে বেশির ভাগই ছিল শিশু। একইভাবে পুরুষ ও নারী মেডিসিন ওয়ার্ডে ঠান্ডাজনিত রোগ নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট ও শ্বাসতন্ত্রের রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। এ ছাড়া বহির্বিভাগেও রোগীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ডগুলো ঘুরে ঘুরে দেখা যায়, মায়েদের কোলে অসুস্থ কয়েকটি শিশু অনবরত কান্না করছে। সদর উপজেলার দশমাইল মোর্তুজাপুর গ্রামের চম্পা খাতুনের দুই শিশু নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে পাঁচ দিন ধরে হাসপাতালটির শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ আগে সাত বছর বয়সী বৈশাখী ও পাঁচ মাস বয়সী শিশু রায়মা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। তাদের অবস্থা এখন কিছুটা উন্নতির দিকে।
শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম অবস্থা চলছে বলে জানান শিশু ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স মোছা শহর বানু। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কথা হয় আলমডাঙ্গার আঠারোখাদা গ্রামের রুবি খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, তিন মাস বয়সী শিশুকে নিয়ে গত পরশু থেকে হাসপাতালে আছেন তিনি। তবে শিশুটির শারীরিক অবস্থার তেমন পরিবর্তন না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে বেশ চিন্তিত তিনি।

হাসপাতালের শিশু বিভাগের পরামর্শক মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শীতের কারণে সদর হাসপাতালে দুই ধরনের শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে—ঠান্ডাজনিত রোগ ও রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া। প্রতিদিন বহির্বিভাগে শিশু রোগীর চাপ বেড়ে যাচ্ছে। ২০০ থেকে ২৫০ জন চিকিৎসা নিচ্ছে। অন্তর্বিভাগে শিশু ওয়ার্ডে গড়ে ৬০টি করে রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। এ ছাড়া ডায়রিয়া ওয়ার্ডেও ৫০ থেকে ৬০ জন করে রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।

এই চিকিৎসকের পরামর্শ, এ সময়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের শুধু খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। ছয় মাস পর্যন্ত শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এ ছাড়া অন্য শিশুদের খাওয়ানোর আগে এবং টয়লেট থেকে বের হওয়ার পর মা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে। আর বেশি মাত্রায় ডায়রিয়া হলে দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।