ইফতারে সিলেটিদের পছন্দ আখনি ও পাতলা খিচুড়ি
কয়েকজন আত্মীয়স্বজন আর প্রতিবেশীকে ইফতারের দাওয়াত করেছেন স্কুলশিক্ষক ফারহানা বেগম। গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার আগেই অতিথিরা হাজির। তখনো বেশ কিছু ইফতারসামগ্রী প্রস্তুতের বাকি ছিল। তাই রান্নাঘরে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে তাঁর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানালেন, বিভিন্ন পদের ইফতারসামগ্রীর পাশাপাশি পাতলা খিচুড়ি আর আখনি করেছেন।
মেহমানদারি কিংবা ঘরোয়া পরিসরে ইফতারে আখনি ও পাতলা খিচুড়ি সিলেটিদের কাছে পছন্দের শীর্ষে থাকে। তাই প্রায় বাড়িতেই ইফতারের আয়োজনে অনেকটা ঐতিহ্যগতভাবেই এখন পাতলা খিচুড়ি ও আখনি থাকে। দোকানেও এসব পদের বিক্রি বেশি।
গতকাল বিকেলে নগরের মদিনা মার্কেট, পাঠানটুলা, আম্বরখানা, জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, তালতলা, লামাবাজার, উপশহর, শিবগঞ্জ, টিলাগড় ও কদমতলী এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, ছোট-বড় প্রতিটি রেস্তোরাঁতেই পাতলা খিচুড়ি আর আখনি বিক্রি হচ্ছে। গরু, খাসি ও মুরগির মাংসের আখনি সমানতালে বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও অবশ্য পাতলা খিচুড়ির পাশাপাশি ভুনা খিচুড়িও বিক্রি হচ্ছে।
নগরের জিন্দাবাজার এলাকার পানসী রেস্টুরেন্টে কথা হয় বিক্রয় কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আহমদের সঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁদের দোকানে মুরগি ও গরুর মাংসের আখনির চাহিদা সব সময় বেশি। গড়ে প্রতিদিন এই দুই ধরনের আখনি কমবেশি ৩০০ কেজি বিক্রি হয়। এর বাইরে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ কেজি পাতলা খিচুড়ি বিক্রি হয়। কেউ কেউ এ ধরনের খিচুড়িকে নরম খিচুড়িও বলে থাকেন।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গরুর মাংসের আখনি প্রতি কেজি ৩৮০ থেকে ৪২০ টাকা, মুরগির মাংসের আখনি প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা, পাতলা খিচুড়ি প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য ইফতারসামগ্রীর তুলনায় পাতলা খিচুড়ি ও আখনি তুলনামূলকভাবে বেশি বিক্রি হয়ে থাকে বলে একাধিক বিক্রেতা জানিয়েছেন।
নগরের একাধিক রোজাদার বললেন, একটা সময় সিলেটে বাসাবাড়িতেই ইফতারসামগ্রী তৈরি হতো। তখন প্রায় সব বাড়িতেই পাতলা খিচুড়ি ও আখনি হতো। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট নগরের অনেকেই দোকান থেকে ইফতারসামগ্রী কেনেন। এ অবস্থায় প্রায় সবার কেনার তালিকায় নিয়মিতই পাতলা খিচুড়ি ও আখনি থাকে। সিলেটিদের কাছে দীর্ঘদিন ধরে এ দুটো পদের কদর ছিল, আছে।
আম্বরখানা এলাকায় গরুর মাংসের আখনি কিনছিলেন খলিল মিয়া (৫১) নামের এক ব্যক্তি। তাঁর বাসা বড়বাজার এলাকায়। তিনি বলেন, বাসায় বিভিন্ন পদের ইফতারসামগ্রীর পাশাপাশি পাতলা খিচুড়িও রান্না হয়েছে। বাজার থেকে শুধু গরুর মাংসের আখনি কিনতে এসেছেন। এখানকার ইফতার-সংস্কৃতিতে খিচুড়ি-আখনিই প্রধান বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সিলেটিদের ইফতার-সংস্কৃতির বিষয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের সভাপতি শামসুল আলম সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, সিলেট অঞ্চলে ইফতারের নিজস্ব ঐতিহ্য আছে। খিচুড়ি না হলে যেন ইফতারই হয় না। ভুনা হোক আর পাতলা হোক, খিচুড়ি লাগবেই। সঙ্গে পেঁয়াজু আর বেগুনি। অনেকে আবার খিচুড়ির পরিবর্তে আখনিও খেয়ে থাকেন। কোনো কোনো পরিবারে আবার পাতলা খিচুড়ি ও আখনি—দুটো পদই ইফতারে রাখা হয়।