লালমনিরহাটের পাটগ্রামে ধানের দরপতনে চিন্তিত চাষি

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে ধানের দাম কমে গেছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি মণ ধানে প্রায় ৯০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। ফলে হাটবাজারে ধানের দাম নিম্নমুখী হওয়ায় উপজেলার কৃষকেরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাটগ্রাম উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ২১ হাজার ২৬০ হেক্টর চাষযোগ্য আবাদি জমি রয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছর ৪ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। আর ধান উৎপাদিত হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার ৮৭৫ টন। গত বছর ৪ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে।

পাটগ্রাম উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় সরকারিভাবে ৩২ টাকা দরে ৪৭০ টন ধান এবং ৪৫ টাকা দরে ১ হাজার ৫৫২ টন চাল ক্রয় করা হবে। গত ২২ মে থেকে ধান ও চাল ক্রয় শুরু হয়েছে। 

বাজারে চাল বিক্রয় কমে গেছে। তা ছাড়া ধান কিনে তা কোথাও বিক্রির জন্য পাঠানো যাচ্ছে না। তাই কিছুটা দাম কমে গেছে এ হাটে। 
বেলাল হোসেন, ধান ও চাল ব্যবসায়ী

উপজেলার ধান ও চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলার বৃহত্তম রসুলগঞ্জ হাটটি বিভিন্ন জেলার ধান ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভরশীল। দেশের বিভিন্ন জেলায় ধানের দাম কমেছে। ফলে বাইরের ব্যবসায়ীরা রসুলগঞ্জ হাটে না আসায় ধানের দাম কমছে বলে ভাষ্য ব্যবসায়ীদের। 

সরেজমিন গত রোববার পৌর রসুলগঞ্জ হাটে ও গ্রামের বিভিন্ন হাটবাজারে গিয়ে কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বোরো ধানের ভরা মৌসুমের শুরুতেই পাটগ্রামের বিভিন্ন হাটবাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি হয় ১০০০ থেকে ১০৭০ টাকায়। গত বৃহস্পতিবার তা কমে ৯৫০ থেকে ৯৭০ টাকায় নেমে যায়। রোববার ৯০০ থেকে ৯২০ টাকায় কেনাবেচা হয়েছে প্রতি মণ ধান। এতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি মণ ধানের দাম কমেছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। 

ধানের দাম কমার পেছনে কয়েকটি কারণ জানান ধান ব্যবসায়ী আবু আলম মিয়া। তিনি বলেন, টানা বৃষ্টি চলছে। তাই দাম কমতির দিকে চলে যাচ্ছে। আরেক ধান ও চাল ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন জানান, কৃষকের ঘরে ধান উঠছে। এতে বাজারে চাল বিক্রয় কমে গেছে। তা ছাড়া ধান কিনে তা কোথাও বিক্রির জন্য পাঠানো যাচ্ছে না। তাই কিছুটা দাম কমে গেছে এ হাটে। 

উপজেলার কুচলিবাড়ি ইউনিয়নের দৌলপুর গ্রামের কৃষক আবদুর সোবহান বলেন, এবার ধান উৎপাদন করতে খরচ বেশি হয়েছে। প্রচণ্ড খরায় মেশিন দিয়ে জমিতে বেশি পানি দিতে হয়েছে। ফলে তেলের খরচও বেশি হয়েছে। তা ছাড়া বিঘাপ্রতি সার প্রায় ১ হাজার ৮০০ থেকে ২০০০ হাজার টাকা, হালচাষ ও ধানের বীজ রোপণ ও কর্তন, মাঠ থেকে বাড়ির উঠানে আনা, মাড়াইসহ অন্যান্য খরচ—সব মিলিয়ে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা। ধানের যে দর, তাতে নিজের খরচও উঠে না।