দুর্বৃত্তদের হামলায় ছেলে নিহত, বাঁচাতে গিয়ে বাবা গুরুতর আহত

ময়মনসিংহের নান্দাইলে দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত ব্যক্তির বাড়িতে ভিড়। আজ বৃহস্পতিবার সাড়ে ১১টার দিকে হাড়িয়াকান্দি গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় দুর্বৃত্তদের হামলায় আল আমীন (৩৮) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন রমজান আলী (৭০)। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

গতকাল বুধবার রাত ১০টার দিকে নান্দাইলের জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের হাড়িয়াকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। হামলার পর দা হাতে পালানোর সময় মাজহারুল (২৮) নামের এক তরুণকে গ্রামবাসী আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পুলিশ আজ বৃহস্পতিবার আল আমীনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।

হাড়িয়াকান্দি গ্রামে গিয়ে জানা যায়, রমজান আলীর বাড়ি ছিল এলাকার সলিম সরকারের বাড়ির পাশে। প্রায় ২৭ বছর আগে ওই জমিজমা বিক্রি করে আধা কিলোমিটার দূরে নতুন বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছিলেন।

নিহত আল আমীন (৩৮)
ছবি: সংগৃহীত

রমজান আলীর বড় ছেলে আবু সাইদ (৫৫) বলেন, তাঁর বাবার বিক্রি করা জমিতে ভাগ পান বলে দাবি করে আসছিলেন তাঁদের বংশীয় শরিকেরা। এ নিয়ে গ্রামে একাধিক সালিস হলেও বিষয়টি মীমাংসা হয়নি। এটা ছাড়া তাঁদের আর কারও সঙ্গে কোনো ঝামেলা নেই। হামলাকারীরা তাঁদের পরিচিত নন। তবে এলাকার লোকজন বলেছেন, আটক মাজহারুল পাশের ধীতপুর গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর বাবার অবস্থা সংকটাপন্ন।

নিহত আল আমীনের স্ত্রী নাজমা খাতুন বলেন, তাঁর স্বামী রমজান উপলক্ষে বাজারসদাই করে গতকাল রাতে বাড়ি ফেরেন। সাইকেল থেকে বাজারের থলে নামিয়ে তাঁকে দিচ্ছিলেন। এ সময় সেকান্দর, তাহের ও সুমন নামের তিনজন তাঁর স্বামী আল আমীনকে ডাক দেন। তাঁর স্বামী তাঁদের সঙ্গে কথা বলার জন্য এগিয়ে যান। একটু পর তাঁর আর্তচিৎকার শুনতে পান। তিনি চিৎকার শুনে দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে দেখেন, তাঁর স্বামীকে দুর্বৃত্তরা কোপাচ্ছেন। আর তাঁকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে গেছেন তাঁর শ্বশুর রমজান আলী। ওই সময় তাঁর শ্বশুরকেও দুর্বৃত্তদের একজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে উঠানে ফেলে রাখে।

আল আমীনের বড় ভাবি আসমা খাতুন (৪৫) বলেন, তিনি চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে ঘর থেকে বের হয়ে দেখতে পান, উঠানে তাঁর শ্বশুর ও দেবর রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। দা হাতে একজন তাঁর ঘরে ঢোকার জন্য দৌড়ে আসছেন। এ সময় তিনি চিৎকার করতে থাকেন। তখন আশপাশ থেকে লোকজন ছুটে এসে একজনকে আটক করেন। এ সময় গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁর শ্বশুরকে নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আকন্দ মুঠোফোনে বলেন, হত্যাকাণ্ডের কারণ জানার জন্য আটক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনা সম্পর্কে বিশদ জানার জন্য পুলিশ আহত রমজান আলীর সঙ্গে কথা বলবেন। নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো থানায় মামলা করা হয়নি।