বরিশালে যানবাহন বন্ধ, গণসমাবেশস্থলে বিএনপির নেতা–কর্মীদের অবস্থান

বরিশাল বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বিএনপির সমাবেশস্থলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা নেতা-কর্মীরা গল্প করে সময় কাটাচ্ছেন। আজ শুক্রবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, আজ শুক্রবার সকাল থেকেই বরিশাল থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে চলছে না তিন চাকার কোনো যান। ভোলার সঙ্গে নৌ যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে। এ কারণে সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

আজ সকালে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, কোনো বাস চলছে না। মহাসড়কে অন্য যানবাহনও নেই। কম দূরত্বের যাত্রীরা ভ্যান ও রিকশায় করে গন্তব্যে যাচ্ছেন। তবে রিকশা ও ভ্যানের ভাড়া স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। একই সঙ্গে বরিশাল নগরেও কোনো গণপরিবহন নেই। নগরের সড়কগুলো ফাঁকা। শুধু রিকশা চলাচল করছে। তা–ও হাতে গোনা।

আরও পড়ুন

আগামীকাল শনিবার বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় গণসমাবেশ। এর এক দিন আগে বরিশালে বাস ও তিন চাকার যানের ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। এ ধর্মঘটের কারণে পুরো বিভাগের সড়ক যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

সকাল থেকেই বরিশাল নগরের রাস্তাঘাট ফাঁকা। বেলা সকাল ১১ টার দিকে নগরের জিলা স্কুল মোড়ের চিত্র
ছবি: প্রথম আলো

এদিকে নগরের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বিএনপির গণসমাবেশস্থলে গতকাল রাত থেকেই বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে বিএনপির নেতা-কর্মী, সমর্থকেরা আসতে শুরু করেন। আজ শুক্রবারও তা অব্যাহত আছে। কেউ মাইক্রাবাসে, কেউ ছোট ট্রাকে, মালবাহী জাহাজে করে আসছেন উদ্যানে। সঙ্গে খাবার, বিছানাপত্র, পানি। সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগেই তাঁরা অবস্থান নিয়েছেন সমাবেশস্থলে। তাঁদের জন্য রান্না চলছে বঙ্গবন্ধু উদ্যানের সমাবেশের মঞ্চের পাশেই।

আরও পড়ুন

আনোয়ার হোসেন এসেছেন ঝালকাঠি থেকে। শুক্রবার থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে এই কারণে তিনি বৃহস্পতিবার দুপুরেই ১৫ জনের দলের সঙ্গে গণসমাবেশস্থলে এসেছেন। থাকার কোনো জায়গা না থাকায় মাঠেই বিছানা পাতেন তাঁরা। হালকা শীত আর খোলা মাঠে বাতাসে কোনো রকম জড়সড়ো হয়ে শুয়ে ছিলেন। আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দলকে ভালোবাসি। তাই দলের ডাকে ঘরে থাকতে পারিনি, দুই দিন আগেই মাঠে ছুটে এসেছি।’

বরগুনার বুড়িরচর থেকে একটি কার্গো জাহাজে করে এসেছেন রফিকুল ইসলাম (৪৫)। তিনি বলেন, একটি কার্গোতে তাঁরা ৪০০ জন এসেছেন। আগে আরও অনেকে এসেছেন। অনেকে আজ আসছেন।

গণসমাবেশ মঞ্চের পাশেই নেতা–কর্মীদের জন্য রান্নার ব্যবস্থা করা হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

বরগুনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুবুল আলম ফারুক মোল্লা বলেন, তাঁরা অন্তত ১০ হাজার লোক নিয়ে বৃহস্পতিবার বরিশালে এসেছেন। আরও অনেকে পথে আছেন। জেলাভিত্তিক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় রান্নাবান্না করে নেতা-কর্মীদের খাওয়ার ব্যবস্থা করছেন।

আরও পড়ুন

কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান বলেন, ‘পরিবহন বন্ধ করে মানুষকে আটকে রাখা যাবে না। সমাবেশস্থলেই এত নেতা-কর্মী, তাহলে ভাবুন বরিশাল নগরীতে কত নেতা-কর্মী অবস্থান করছেন। সমাবেশে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটবে।’

গণসমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতা–কর্মীদের অনেকে বরিশালে বিএনপির দলীয় কার্যালয় এলাকায় অবস্থান করছেন
ছবি: প্রথম আলো

আবাসিক হোটেলে পুলিশের অভিযানসহ নানা হয়রানি থেকে বাঁচতে দূরদূরান্ত থেকে আসা নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে রাত্রিযাপন করছেন বলে জানান মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান। তিনি বলেন, সমাবেশ ঠেকাতে সব ধরনের পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। তবে তাদের কোনো উদ্যোগই সফল হবে না। জনগণের জন্য আন্দোলনে সব বাধা অতিক্রম করে আগেভাগেই সমাবেশস্থলে হাজির হচ্ছেন নেতা-কর্মীরা।