শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের তিন ক্লাবকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার দাবি

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তিনটি স্বেচ্ছাসেবী ক্লাব রাজনীতি ও দুর্নীতিমুক্ত করার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ। বুধবার দুপুরে রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

বরিশালের শের-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তিনটি ক্লাব রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ। তিনটি ক্লাব হলো সন্ধানী ক্লাব, মেডিসিন ক্লাব ও যুব রেড ক্রিসেন্ট ক্লাব। এ সময় ক্লাবগুলো পরিচালনায় ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন তাঁরা।

বুধবার দুপুরে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তাঁরা। শিক্ষার্থীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য দেন শিক্ষার্থী মো. তওহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, সন্ধানী, মেডিসিন ক্লাব এবং যুব রেড ক্রিসেন্ট নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো শিক্ষা ও সমাজসেবামূলক কাজের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতারা এসব ক্লাব নিজেদের কবজায় নেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মেয়রদের মদদপুষ্টদের দিয়েই ওই সংগঠনগুলো পরিচালিত হতো।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ৫ আগস্টের পর আন্দোলনকারী ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ক্লাবগুলোর বর্তমান ছাত্রলীগের মদদপুষ্ট কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে এবং সংস্কার করা হবে প্রতিটি ক্লাব। এর পরিপ্রেক্ষিতে কলেজ অধ্যক্ষ, হাসপাতালের আগের পরিচালক, বর্তমান পরিচালকের সঙ্গে কয়েক দফায় আলোচনা হয়। কিন্তু তাঁরা এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। এরই ফলে ক্লাবগুলো এখন পর্যন্ত ছাত্রলীগের মদদপুষ্ট কমিটি দিয়েই পরিচালিত হয়ে আসছে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক ক্লাব তিনটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন এবং তালাবদ্ধ করে দেওয়া হয়।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, এসব ক্লাব রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য তাঁরা ছয়টা দাবি উত্থাপন করেন। দাবি ছয়টি হলো, ছাত্রলীগের মদদপুষ্ট কমিটি বিলুপ্ত করা। গঠনতন্তের নীতিমালা অনুযায়ী সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের সমন্বয়ে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা। ক্লাবগুলোকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা। অনতিবিলম্বে রক্ত বিক্রির নামে অর্থবাণিজ্য বন্ধ করা। ক্লাব ফান্ডের আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছ হিসাব নিশ্চিত করা। বিগত দিনে যাঁরা এসব অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী ক্লাবগুলোকে রাজনীতিকরণ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া।

সংবাদ সম্মেলনে তওহীদুল ইসলাম বলেন, ‘সম্প্রতি এই ক্লাবগুলো পরিচালনার জন্য একটি নতুন উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়েছে। কিন্তু আমরা কীভাবে নিশ্চিত হব যে উপদেষ্টা পরিষদের হাত ধরে আবারও স্বেচ্ছাসেবী ক্লাবগুলো রাজনীতির আঁতুড়ঘরে পরিণত হবে না? আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা হতো ক্লাবের সদস্যদের মাধ্যমে। ক্যাম্পাসে স্টুডেন্ট র‍্যাগিং, অরাজকতা, মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল ক্লাবের বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হওয়া সত্ত্বেও রক্ত সংগ্রহ ও প্রদানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন খাতে রোগীদের থেকে অনৈতিকভাবে ফি নেওয়া হয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে আয়-ব্যয়ের হিসাব হওয়ার কথা থাকলেও কখনোই এটা করা হয়নি। ক্লাবগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা এ সুযোগে ক্লাবের টাকা আত্মসাৎ করেছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বরিশালের শের-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মো. নাজমুস সাকিব, মো. এনামুল হক, মো. মশিউর রহমানসহ অন্য শিক্ষার্থীরা।

সন্ধানী শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ইউনিটের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি ও কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক আহাদ সাদনান খান বলেন, তিনটি ক্লাব নিয়ে উত্তেজনার পর তা ১২ ডিসেম্বর তালাবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো বুধবার থেকে পুনরায় খুলে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এসব ক্লাব পরিচালনার জন্য একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়েছে।

আহাদ সাদনান খান আরও বলেন, এসব ক্লাব স্বেচ্ছাসেবা দেয়। এখন ক্লাবগুলোর সঙ্গে যাঁরা সক্রিয় ছিলেন না, তাঁরা নেতৃত্ব পাওয়ার জন্য নানা অভিযোগ তুলে একটা বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টির অপচেষ্টা করছেন। তাঁরা যেসব অভিযোগ করছেন, তার কোনো তথ্যপ্রমাণও নেই। আর ছাত্রলীগের ট্যাগ দিয়ে তাঁরা উদ্দেশ্য হাসিল করতে চাইছেন।