ঝালকাঠিতে কাজ না পেয়ে শ্রমিকদের হাহাকার
বৃষ্টিভেজা ভোর থেকে শ্রমজীবী মানুষের ভিড় শ্রমের হাটে। গ্রাম থেকে দরিদ্র শ্রমজীবী বহু মানুষ ঝালকাঠি শহরের সাধনার মোড়ে শ্রমের হাটে এসেছেন। সড়কের পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। কারও হাতে বাঁশের ঝুড়ি, কাস্তে, কারও হাতে কোদাল-টুকরি। তবে ক্রেতা একদমই নেই। কাজ না পেয়ে শ্রমিকদের হাহাকার।
সারা দেশে চলমান আন্দোলন, সহিংসতা ও কারফিউর প্রভাব পড়েছে শ্রমের হাটে। শ্রমিকেরা কাজ না পেয়ে পড়েছেন বিপাকে। উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় কাটছে দিন। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধনার মোড়ে প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কাজ করানোর জন্য শ্রমিক বেচাকেনা হয়। একে তো দেশের চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, তার মধ্যে বর্ষাকালে অধিকাংশ কৃষিজমি তলিয়ে আছে। গৃহস্থ মানুষের কাজ কমে গেছে। আয়-উপার্জন না থাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন শ্রমিকেরা।
আজ সোমবার সকালে শ্রমের হাটের কথা হয় ৭০ বছর বয়সী বীরেণ চন্দ্র নাথের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, পাঁচ সদস্যের সংসারে বড়ই অভাব। বড় ছেলে কিছু কাজ করে সংসারে সহায়তা করেন। এখন সেই অবস্থাও নেই। মাসখানেক ধরে তিনিও কাজ পাচ্ছেন না। বাড়ি থেকে কাজের সন্ধানে বের হওয়ার ভাড়াও এখন তাঁর হাতে নেই। তাঁরা বিপদে আছেন।
কয়েকজন কৃষিশ্রমিক জানালেন, এক দিনের কাজে তাঁরা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করে পান। বর্তমানে জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক, তাতে এই টাকায় সংসার চালানো অনেক কষ্টকর। দুই দিন কাজ করলে তিন দিন বেকার বসে থাকতে হয়। এর মধ্যে আবার আন্দোলন, সহিংসতা, কারফিউ।
চলমান পরিস্থিতিতে ১০ দিনে একটি কাজও পাননি। তিন মেয়েসহ পাঁচজনের সংসার তাঁর। কাজ না থাকায় অর্ধাহার-অনাহারেই কাটছে তাঁদের জীবন।
শ্রমের হাটে এসেছেন দিনমজুর বাদশা মৃধা (৫০)। তিনি প্রতিদিন ভোরে রাজাপুর উপজেলার পরমহল গ্রাম থেকে কাজের খোঁজে এই হাটে আসেন। নিজের শ্রম বিক্রি করতে ক্রেতার আশায় বসে ছিলেন হাটে। কিন্তু সকাল আটটা বাজলেও কেউ কাজের জন্য তাঁকে নেননি। দিনমজুর বাদশা মৃধা বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে ১০ দিনে একটি কাজও পাননি। তিন মেয়েসহ পাঁচজনের সংসার তাঁর। কাজ না থাকায় অর্ধাহার-অনাহারেই কাটছে তাঁদের জীবন।
ঝালকাঠি শহরের চাঁদকাঠি এলাকার শাহ আলম বলেন, ডালের কেজি ১২০, আলুর কেজি ৫৫ টাকা। চালসহ নিত্যপণ্যের এত দাম যে এসব কেনা তাঁদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তাই সরকারের উচিত ত্রাণ দিয়ে সহায়তা করা।