শক্তিশালী মানুষদের বিপক্ষে আমাদের লড়তে হয়: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘পরিবেশ নিয়ে আমরা যখন কথা বলি, তখন একদল শক্তিশালী মানুষের বিপক্ষে আমাদের লড়তে হয়। তাই আমাদের সব শক্তি একসঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের ডকুমেন্টস সংগ্রহ করতে হবে, বনের সীমানা চিহ্নিত করতে হবে। তবেই আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ, যারা দখলকারী, তারা অত্যন্ত শক্তিশালী, সুতরাং তাদের সঙ্গে লড়তে হলে আমাদের সঠিক তথ্য লাগবে।’
গাজীপুরে পরিবেশদূষণ থেকে উত্তরণে নাগরিক সংলাপে এসব কথা বলেন সৈয়দা রিজওয়ানা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুরের পিটিআই অডিটরিয়ামে এ সংলাপের আয়োজন করে বেলা ও নদী পরিব্রাজক দল।
নদী দূষণ নিয়ে বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, দখল–দূষণসহ নানা কারণে গাজীপুরের নদীগুলো আজ অনেকাংশে হারিয়ে যাচ্ছে। নদী দুষণ বন্ধ করতে নদী পাড়ে মানুষদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। নদীর পানি পরীক্ষার জন্য এখন অল্প টাকায় যন্ত্র কেনা যায়। সেই যন্ত্র কিনে তাদের প্রশিক্ষণ দিলে নদী দূষণ কমানো সম্ভব। দখল-দূষণের হাত থেকে নদীকে সুরক্ষা দিতে সচেতন নাগরিকদের সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে হবে।
রিজওয়ানা হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বন ও জলবায়ুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহমুদ হাসান। অনুষ্ঠানের শুরুতেই গাজীপুরের দখল–দূষণ নিয়ে বিশদ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের অধ্যাপক অসীম বিভাকর।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহমুদ হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিদিন সবকিছুর পরও একজন মানুষ থেকে অন্তত ৫০০ গ্রাম বর্জ্য উৎপাদিত হয়। তাহলে দিনে ১৬ কোটি জনগোষ্ঠীর বর্জ্য হচ্ছে প্রতিদিন ৮ কোটি কেজি। আপনারা বন নিয়ে, পরিবেশ নিয়ে এবং দখল–দূষণ নিয়ে কথা বলেছেন। এগুলো নিয়ে পর্যায়ক্রমে কাজ করতে হবে।’
সংলাপে পরিবেশদূষণের কয়েকজন ভুক্তভোগী মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। দখল–দূষণের বিষয়ে তাঁরা তাঁদের মতামত প্রকাশ করেন। প্রতিকারের কী ব্যবস্থা আছে, সেসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়। নদী, পরিবেশ ও বনভূমি দখল ও দূষণের বিভিন্ন পয়েন্ট ও স্থান চিহ্নিত করা হয়।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জেলা নদী রক্ষা কমিটির সদস্য অধ্যপক মুকুল কুমার মল্লিক, গাজীপুর জেলা সমাজসেবার উপপরিচালক আনোয়ার হোসেন, রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মো. এজাজ আহমেদ, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম, জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার শারমিন জাহান, বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মনির হোসেন।
নদীদূষণের বিষয়টি তুলে ধরে এজাজ আহমেদ বলেন, গাজীপুরের নদী ও দূষণকে বাদ দিয়ে কাজ করলে সফলতা আসবে না। গাজীপুরের পানি সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ। রাস্তা হচ্ছে, সেতু হচ্ছে, কিন্তু দূষণের বিষয়ে কাজ তেমন হচ্ছে না।
মুহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, ‘আমাদের নতুন প্রজন্মকে নদী চিনতে হবে। নদী ও পরিবেশ সম্পর্কে উন্নত ও স্পষ্ট ধারণা, নদীর বহুমাত্রিক ব্যবহার, নদীর সুরক্ষা ও সংরক্ষণের নিয়ম জেনে সমাজের প্রয়োজনে তা কাজে লাগানো এবং সর্বোপরি নদীর সঙ্গে স্বাস্থ্যকর সহাবস্থানের ক্ষেত্রে আমাদের প্রয়োজনীয় অন্তর্দৃষ্টি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা শৈশব থেকেই শুরু হওয়া উচিত।’
অনুষ্ঠানে স্থানীয় গানছবি ফোক ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ও ভোকাল কবি মোস্তফা খান এবং শিল্পীরা নদীর দখল-দূষণ ও নদীর কান্না নিয়ে সংগীত পরিবেশন করেন।