পটুয়াখালীর বিচ্ছিন্ন চরের দেড় হাজার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে পটুয়াখালীর উপকূলীয় তিন উপজেলা দশমিনা, গলাচিপা ও রাঙ্গাবালীর ১১টি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ এলাকা থেকে লোকজনকে নিরাপদে আশ্রয়ে সরিয়ে আনা হচ্ছে। শনিবার এসব দ্বীপ থেকে দেড় হাজার মানুষকে মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসেন উপজেলা প্রশাসন ও ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কমিটির (সিপিপি) স্বেচ্ছাসেবকেরা।
রাঙ্গাবালীর উপজেলার বিচ্ছিন্ন চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চর আণ্ডা এলাকায় বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় বাঁধসংলগ্ন বাসিন্দারাও চরম ঝুঁকিতে আছেন। শনিবার বিকেলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই এলাকার অনেক বাসিন্দাকে নিরাপদে চর মোন্তাজ নিয়ে আসা হয়।
রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, এখনো ঝড়বৃষ্টি তেমন না হওয়ায় লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে চাইছেন না। আবার কেউ কেউ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। এরপরও চর আণ্ডার ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ এলাকার অনেককে নিরাপদে আশ্রয়ে চর মোন্তাজে আনা হয়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকায় ট্রলার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সিপিপির সদস্যরা মাইকিং করে লোকজনদের নিরাপদে যেতে আহ্বান জানাচ্ছেন।
দশমিনা উপজেলার পাঁচটি চর থেকে এক হাজারের মতো লোকজনকে সরিয়ে উপজেলা সদরে আনা হয়েছে।
সিপিপি দশমিনার সমন্বয়কারী রায়হান বাদল প্রথম আলোকে বলেন, দশমিনা দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। উপজেলার পাঁচটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপে মানুষের বসতি রয়েছে। এর মধ্যে চর রোবহান, চর শাহজালাল, চর হাদী, চর বাঁশবাড়ীয়া, চর ফাতেমায় ১৫ হাজারের মতো মানুষের বসবাস। এসব চরে নেই পর্যাপ্তসংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র। আবার চর ফাতেমায় কোনো আশ্রয়কেন্দ্রই নেই। তেঁতুলিয়া নদী ক্রমে উত্তাল হয়ে উঠছে। এ কারণে আগেভাগে লোকজন সরিয়ে আনার কার্যক্রম শুরু করেছেন তাঁরা। সকাল ১০টা থেকে লোকজনকে মূল ভূখণ্ড দশমিনায় নিয়ে আসা হচ্ছে। বিকেলে চর হাদীর একটি আশ্রয়কেন্দ্রে বৃদ্ধ, শিশু ও নারীরা উঠেছেন। অনেকে গবাদিপশুও আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন।
দশমিনায় ৬৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে জানিয়ে দশমিনার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল হেলাল প্রথম আলোকে বলেন, বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল থেকে নারী-শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থদের নিরাপদে সরিয়ে আনা হচ্ছে।
গলাচিপা উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, আজ বিকেলে উপজেলার চর কারফারমার ও চর বাংলা থেকে লোকজনকে সরিয়ে আনা হয়েছে। ওই এলাকা থেকে কমপক্ষে পাঁচ শ মানুষকে মূল ভূখণ্ড গলাচিপার বোয়ালিয়া আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে।
গলাচিপার ইউএনও মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল বলেন, চর কারফারমার ও চর বাংলা মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। এই দুই চরের কমপক্ষে পাঁচ শ মানুষকে তাঁরা নিয়ে এসেছেন। সিপিপির সদস্যরা এখনো প্রচারণা চালাচ্ছেন। আরও মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য নৌযান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শহরের বেড়িবাঁধের বাইরে বাস করা মানুষকে মাইকিং করে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সুমন কুমার দেবনাথ প্রথম আলোকে জানান, দুর্যোগের আগে ও পরে মাঠে কাজ করার জন্য সিপিপি ৮ হাজার ৭০০ জন স্বেচ্ছাসেবক এবং জেলা স্বাস্থ্য বিভাগসহ বিভিন্ন সংগঠনের ৭৬টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।