‘এখন রাইতে একটু আরামে ঘুমাইতে পারমু’

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যােগে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। কম্বল পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন শীতার্তরা। বৃহস্পতিবার উত্তর ফুলদি এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার অবহেলিত চরাঞ্চল বেরিমোল্লাকান্দি এলাকার বাসিন্দা মোকসেদা বেগম (৬০)। স্বামী–সন্তান কেউ নেই তাঁর। মানুষের জমিতে কাজ করে দুই বেলা আহার জোগান। থাকেন ছোট্ট একটি খুপরিতে। কাজে গেলে খাওয়া জোটে, কাজ না থাকলে না খেয়ে থাকেন। এই টানাটানির মধ্যে শীতের কষ্ট তাঁর জীবন আরও অসহনীয় হয়ে উঠেছিল।

এ অবস্থায় নতুন একটি কম্বল হাতে পেয়ে ভীষণ খুশি মোকসেদা বেগম। তিনি বলেন, ‘বাজান, এইবার যেই শীত পড়ছে, বাহিরে কাজে যাইতে পারি না। ঘরের বেড়ার ফাঁকফোকর দিয়ে ফুর ফুর কইরা ঠান্ডা বাতাস আহে। রাইতে পাতলা খাতায় (কাঁথা) শীত মানে না। শীতে ঘুমাইতে পারি না। খাওন জোগামু না গরম কাপড় কিনমু? কম্বল পাওনে অহন রাইতে একটু আরামে ঘুমাইতে পারমু।’

আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গজারিয়া উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের ইমামপুর ইউনিয়নের বেরিমোল্লাকান্দি আশ্রয়ণের ৫০, মাথাভাঙা গ্রামের ১০ ও উত্তর ফুলদি সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে শীতার্ত আরও ৫০ দরিদ্র ও অসহায় মানুষের মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে কম্বল বিতরণ করা হয়। মুন্সিগঞ্জ বন্ধুসভার সদস্যরা এসব কম্বল বিতরণ করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি ফয়সাল হোসেন, প্রথম আলো বন্ধুসভার মুন্সিগঞ্জের সহসভাপতি রাজীব পাল, সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক মিতু ইসলাম, তথ্য ও যোগাযোগ সম্পাদক তুষ্ট দাস, বইমেলা সম্পাদক নুসরাত জাহান, বন্ধু আতিকা আকব, ইসমত জাহান।

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যােগে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়। বৃহস্পতিবার বেরিমোল্লাকান্দি এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বেরিমোল্লাকান্দি আশ্রয়ণের বাসিন্দা খয়ারাত আলী (৭৫)। তাঁর দুই ছেলে বিয়ে করে আলাদা থাকেন। বৃদ্ধ স্ত্রীকে নিয়ে খয়ারাত আলী থাকেন আশ্রয়ণ প্রকল্পে। মানুষের কৃষিজমিতে কাজ করে সংসার চালান। কম্বল পেয়ে খয়ারাত আলী বলেন, ‘শীতে আমাগো কেউ খবর নেয় নাই। বুড়া-বুড়ি খুব কষ্টে আছিলাম। কম্বল পাওনে এহন একটু শান্তিতে রাইতে ঘুমাইতে পারমু। কম্বল পাওনে আমাগো অনেক উপকার অইছে।’
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কম্বল নিয়ে বন্ধুসভার বন্ধুরা যান গজারিয়ার উত্তর ফুলদি গ্রামে। কম্বল পেয়ে হাজেরা বেগম (৫৫), হাওয়া বেগমসহ (৬৫) শীতার্ত মানুষেরা উচ্ছ্বসিত হন।

ইমামপুর ইউনিয়নের মাথাভাঙা এলাকার জীর্ণ একটি বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে রিকশাচালক ছেলের সঙ্গে থাকেন নিজামউদ্দিন (৭০)। কোনোরকমে খেয়েপরে ছয়জনের সংসার চলে তাঁদের। কম্বল পেয়ে তাঁর মুখেও ফুটেছে হাসির ঝিলিক। নিজামউদ্দিন বলেন, ‘পোলার যা আয়, তা দিয়ে ভালা কইরা সংসারই চলে না। আবার শীতের কাপড় কিনমু কইথেকা। কোনোরকমে পুরান খেতা গাও দিয়া রাইত পার করছি। কেউ খোঁজ নেয় নাই। তোমরা খোঁজ নিয়া আমাগো কম্বল দিলা, মনডা খুশিতে ভইর‌্যা গ্যাছে। এইবার রাইতে আর শীতে কষ্ট হইব না।’

প্রথম আলো ট্রাস্টের এই উদ্যোগে সহযোগিতা করছে ইলেকট্রো মার্ট লিমিটেড (কনকা)। শীতার্ত মানুষের জন্য প্রথম আলো ট্রাস্টে পাঁচ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এই অনুদানের টাকায় কেনা কম্বল অসহায় ও শীতার্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।
হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল
হিসাব নম্বর: ২০৭২০০০০১১১৯৪
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।
অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।