২৬ ঘণ্টা পরেও গাজী টায়ার্সে আগুন জ্বলছে, নিখোঁজদের অপেক্ষায় স্বজনেরা
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী গ্রুপের টায়ার উৎপাদকারী কারখানা গাজী টায়ার্সে লাগা আগুন ২৬ ঘণ্টা পরও জ্বলছে। আগুন নেভাতে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট। আজ সোমবার রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত নিখোঁজ ব্যক্তিদের খোঁজে কারখানার সামনে অপেক্ষা করছিলেন স্বজনেরা।
এর আগে সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ঢাকা বিভাগের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম। গণমাধ্যমকে তখন তিনি বলেন, ‘এই আগুন পুরোপুরি নেভাতে আরও সময় লাগবে। তবে আগুন আর ছড়াবে না বলে আশা করছি। যেহেতু টায়ার তৈরির কাঁচামাল ও রাসায়নিক অত্যন্ত দাহ্য, সেই কারণে আগুন নেভাতে সময় লাগছে।’
সোমবার রাত ১১টায় কারখানার সামনে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। অপেক্ষমাণ অন্তত ৯ জনের সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, স্বজনদের জন্য রাতভর তাঁরা কারখানার সামনে অপেক্ষা করবেন। আগুনে নিখোঁজদের মৃত্যু হলেও তাঁদের লাশ চান তাঁরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ৪৫ একর আয়তনের পুরো কারখানা প্রাঙ্গণ ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছেয়ে আছে। এর মাঝেই ছয়তলা ভবনটির পাঁচতলায় আগুন জ্বলছে। রাতে কারখানার ভেতর র্যাব, পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে। শিল্প পুলিশ স্বজনদের কারখানার ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। তাঁরা বারবার স্বজনদের শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছিলেন।
গাজী টায়ার্স কারখানার মালিক নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। রোববার ভোররাতে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন আওয়ামী লীগের এই নেতা।
গত রোববার রাত নয়টায় রূপগঞ্জের খাদুন এলাকার কারখানাটির ছয়তলা একটি ভবনে লুটপাট চলাকালে নিচতলায় সিঁড়ির মুখে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে ভবনটির ভেতরে থাকা অনেকেই আটকা পড়েন। এখন পর্যন্ত ১৭৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। স্বজনদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নিখোঁজের একটি প্রাথমিক তালিকা করেছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। তবে তাঁরা কেউ কারখানার শ্রমিক নন বলে কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি।
এদিকে রাত ১১টায় গাজী টায়ার্সের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ছয়তলা ভবনটি মূলত তাঁদের কারখানার কাঁচামালের গুদাম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আগুন লাগার সময় গুদামে প্রচুর পরিমাণে রাবার ও রাসায়নিক মজুত ছিল।
গাজী টায়ার্সের পক্ষ থেকে প্রথম আলোকে জানানো হয়েছে, খাদুন এলাকার প্রায় ৪৫ একর জায়গাজুড়ে কারখানাটির অবস্থান। ভেতরে শেডসহ অন্তত ১৬টি স্থাপনা রয়েছে। ২০০২ সালে কারখানাটির উৎপাদন শুরু হয়। কারখানাটিতে দেশে উৎপাদিত রাবার থেকে রিকশা, বাস, ট্রাক, পিকআপ, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনের টায়ার তৈরি হতো। কারখানাটিতে প্রায় ৪ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন।