দুর্গাপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবায়দুর রহমানের নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে দুর্গাপুর উপজেলার ঝালুকা ইউনিয়নের কাঁঠালবাড়িয়া বাজারে এ ঘটনা ঘটেছে। এই আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদের সমর্থকেরা এই হামলা করেছেন বলে ওবায়দুর রহমানের সমর্থকেরা অভিযোগ করেছেন।
এ ঘটনায় ওবায়দুর রহমানের কর্মী স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম বাদী হয়ে দুর্গাপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে ঝালুকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান, ইউপি চেয়ারম্যান আক্তার আলী, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রমজান আলীসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ এবং আরও কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করার আবেদন হয়েছে। যদিও অভিযোগটি আজ রাত পর্যন্ত মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়নি।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, দুর্গাপুরের কাঁঠালবাড়িয়া বাজারে স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবায়দুর রহমানের নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করেছেন নৌকার প্রার্থীর সমর্থকেরা। ওই সময় আবদুল ওয়াদুদ কাঁঠালবাড়িয়া বাজারে গণসংযোগ করছিলেন। নৌকার প্রার্থীর সমর্থকেরা দলবদ্ধ হয়ে লাঠিসোঁটা ও দেশি অস্ত্র নিয়ে অতর্কিতভাবে বাদী আশরাফুল ইসলামকে মারধর শুরু করেন। তাঁর চিৎকারে রাফি ও তুহিন নামের তাঁদের দুজন কর্মী এগিয়ে এলে তাঁদেরও মারধর করা হয়। কার্যালয়ে থাকা ৫০টি চেয়ার ভাঙচুর করেছেন হামলাকারীরা। তাঁরা চিৎকার করে বলেন, ‘পুঠিয়া দুর্গাপুরের বুকে একমাত্র প্রার্থী আবদুল ওয়াদুদ ব্যতীত কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণা এমনকি কোনো নির্বাচনী অফিস থাকবে না। যদি কেউ কোনো নির্বাচন অফিস স্থাপনের চেষ্টা করে বা সাহস করে, তাদের বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিব।’
এদিকে হামলার ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা গেছে, নৌকার প্রার্থী আবদুল ওয়াদুদের কর্মী-সমর্থকেরা ওই সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবায়দুর রহমানের নির্বাচনী কার্যালয়ে অবস্থান করে ঘটনাটি মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছেন। ঠিক একই সময় ভাঙচুর করা নির্বাচনী কার্যালয়ের সামনের রাস্তা দিয়ে আবদুল ওয়াদুদের গাড়ি যেতে দেখা যায়।
স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবায়দুর রহমান অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন যখন দেশে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে যাচ্ছে, ঠিক তখনই পেশিশক্তি ব্যবহার করে আবদুল ওয়াদুদ নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশকে বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছেন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তাঁর কর্মী-সমর্থকদের মারধর করা হচ্ছে। নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করা হচ্ছে। বিষয়টি লিখিতভাবে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির কাছে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্তদের একজন রমজান আলী বলেন, ‘কোনো চেয়ার ভাঙচুর করা হয়নি। তারা নিজেরাই ভেঙেছে। ওই সময় নৌকার প্রার্থী আবদুল ওয়াদুদ বাজারে গণসংযোগ করছিলেন। তখন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কার্যালয়ে একটি মাইক বাজছিল। কেউ একজন গিয়ে মাইকটি বন্ধ করে দেন। সঙ্গে সঙ্গে পাশ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী কর্মীরা দৌড়ে আসেন। তখন তাঁরা বলেছেন, তাঁদের প্রার্থী চলে যাওয়ার পরে মাইক বাজালে সুন্দর হয়। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে ঠেলাঠেলি হয়েছে। এ ছাড়া আর কিছু হয়নি।’
দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাইরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুরের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। সাময়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লেও পরিস্থিতি আপাতত স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনা অত বড় নয়। কয়েকটি চেয়ার ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হবে না। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য পাঠানো হবে।
নৌকার প্রার্থী আবদুল ওয়াদুদ রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি ২০০৮ ও ২০১৪ সালে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবায়দুর রহমান রাজশাহী জেলা যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি।