স্থাপনায় হামলায় ক্ষতি ১৯ কোটি, সংস্কার নিয়ে শঙ্কা 

বরিশাল নগরের বিবির পুকুরপাড়ে আগুনে জ্বলছে সিটি করপোরেশনের অ্যানেক্স ভবন। গত ৫ আগস্টের ছবি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বরিশাল সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ফলে প্রায় ১৯ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাগুলো সংস্কার নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, এসব সংস্কার করতে যে অর্থের প্রয়োজন, তা বর্তমানে করপোরেশনের নেই। এ ছাড়া সরকারি তহবিল থেকেও এসব সংস্কারে বরাদ্দ পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

নগর ভবন সূত্র জানায়, হামলায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নগরের বিবির পুকুরপাড়ে পাঁচতলা অ্যানেক্স ভবন ও শহীদ মিনারসংলগ্ন বঙ্গবন্ধু মিলনায়তন। অ্যানেক্স ভবনটি সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেওয়ায় সিটি করপোরেশনের জরুরি সেবামূলক কাজ ব্যাহত হচ্ছে। অ্যানেক্স ভবন থেকে শিশুদের টিকা, মশকনিধন, জন্ম–মৃত্যুনিবন্ধনসহ জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ সেবা দেওয়া হতো। অ্যানেক্স ভবনের নিচতলায় বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ও ছিল।

সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আহসান উদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। এসব স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে করপোরেশনের একটি কারিগরি দল। এতে করপোরেশনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৮ কোটি ৭৫ লাখ ৩১ হাজার ১৪৫ টাকা।

নগর ভবন সূত্র বলছে, অগ্নিসংযোগে পাঁচতলা অ্যানেক্স ভবনটি পুড়ে ক্ষতি হয়েছে ১২ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এ ভবনে সংরক্ষিত জনস্বাস্থ্য বিভাগের সরকারি প্রতিষেধক (টিকা), লজিস্টিক মালামাল, ভিটামিন এ ক্যাপসুল, জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন সরঞ্জামাদি ও আসবাব পুড়ে গেছে। এতে ১ কোটি ৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। মশকনিধন কার্যক্রমের ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, আসবাব, ওষুধ ও মালামাল পুড়ে ক্ষতি হয়েছে ৬৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা। ভবনের নিচতলায় পরিচ্ছন্নতা বিভাগের মালামাল ও আসবাব পুড়ে ক্ষতি হয়েছে ১৫ লাখ ৩২ হাজার টাকা।

এ ছাড়া বরিশাল নগরের সদর রোডের বিবি পুকুরের চারপাশের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ভাঙচুর ও নষ্ট করে ক্ষতি করা হয়েছে ৩ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসংলগ্ন পাঁচতলাবিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু মিলনায়তন ভাঙচুর ও মালামাল নষ্ট করায় ক্ষতি হয়েছে ৪ কোটি ৪১ লাখ ২৭ হাজার টাকা। নগরের ফজলুল হক অ্যাভিনিউ এলাকায় তিনতলাবিশিষ্ট নগর ভবনেও ওই দিন আংশিক ভাঙচুর চালানো হয়। এতে ক্ষতি হয়েছে ৭ লাখ ২৩ হাজার টাকা।

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল ও অন্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, ক্ষতি নিরূপণের পর করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এক মাস অতিবাহিত হলেও কোনো জবাব মেলেনি।

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সিটি করপোরেশনগুলোকে নিজেদের রাজস্ব আয় দিয়ে চলতে হবে। নিজস্ব অবকাঠামো উন্নয়ন-সংস্কারও নিজেদের আয় দিয়েই করতে হবে। সরকারের কাছ থেকে এসব স্থাপনা মেরামতের ব্যাপারে বরাদ্দ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। আবার বরিশাল সিটি করপোরেশনের রাজস্ব আয় কম। নিজস্ব আয় দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাই দেওয়া যায় না। তাই সিটি করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে এসব ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা মেরামত করা এখন সম্ভব নয়। সংস্কার নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। 

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ও বেশির ভাগ কাউন্সিলর। এরপর সরকার এক প্রজ্ঞাপনে দেশের সব সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়রদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়। এই প্রজ্ঞাপন জারির পর বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. শওকত আলী ১৯ আগস্ট বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের দায়িত্ব নিয়েছেন।

প্রশাসক ও বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার শওকত আলী গতকাল শনিবার বিকেলে বলেন, ‘আমি দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই ক্ষয়ক্ষতির এই বিবরণ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। কিন্তু এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কিংবা বরাদ্দ দেওয়া হবে কি না, সে ধরনের কোনো নির্দেশনা এখনো পাইনি’। তিনি আরও বলেন, এসব ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা মেরামতে সরকারের বরাদ্দ পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। করপোরেশনের যে আয়, তা দিয়ে করপোরেশনের ৫০০ থেকে ৬০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন-ভাতা দেওয়া যাচ্ছে না। সেখানে নিজস্ব অর্থায়নে এসব স্থাপনা মেরামতের সামর্থ্য করপোরেশনের নেই। তারপরও তাঁরা বিষয়টি দেখছেন।