বগুড়ায় জোড়া খুন, অভিযোগের তির আওয়ামী লীগ নেতা সার্জিলের দিকে

লাশপ্রতীকী ছবি

বগুড়ায় ঈদের রাতে দুজনকে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ একজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে শহরের নিশিন্দারা চকরপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।  

নিহত দুজন হলেন নিশিন্দারা চকরপাড়া এলাকার মোহাম্মদ শরীফ (১৮) ও মোহাম্মদ রোমান (১৬)। প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত শরীফের মামাতো ভাই চকরপাড়া এলাকার আবদুর রহিম বলেন, শরীফ পেশায় এলপি গ্যাসের ব্যবসায়ী এবং রোমান শহরের সাতমাথায় ফুটপাতে ভ্যানে করে কাপড়ের ব্যবসা করত। রোমানের নানাবাড়ি চকরপাড়া এলাকায়। শরীফকে সে মামা ডাকত।

আবদুর রহিমের দাবি, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সৈয়দ সার্জিল আহম্মেদ জড়িত। তিনি বগুড়া শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়া তিনি বগুড়া জেলা পরিষদের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার ভাষ্য, গতকাল রাতে ঘটনাস্থলে গোলাগুলির আওয়াজ শুনে বাইরে এসে শরীফ ও রোমানকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান তাঁরা। পাশেই তাঁদের আরেক বন্ধু আজমির হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়ে গোঙাচ্ছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সৈয়দ সার্জিল আহম্মেদ জড়িত। তিনি বগুড়া শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়া তিনি বগুড়া জেলা পরিষদের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান।
আবদুর রহিম, প্রত্যক্ষদর্শী

প্রত্যক্ষদর্শী আবদুর রহিমের ভাষ্য, শহরের নিশিন্দারা রাস্তা সংস্কারের কাজ চলছিল। ঈদের দিন বিকেলে নিশিন্দারা সড়কের পাশে জেলা পরিষদের সদস্য সৈয়দ সার্জিল আহম্মেদের গাড়ি দাঁড় করানো ছিল। এ সময় রোমান মোটরসাইকেলে চকরপাড়ায় ফিরছিলেন। যাতায়াতের পথ বন্ধ করে প্রাইভেট কার সড়কের পাশে রাখা নিয়ে রোমানের সঙ্গে সার্জিলের গাড়িচালকের বিতণ্ডা হয়।

বিতণ্ডার জেরে দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে মোটরশ্রমিক নেতা সৈয়দ কবির আহম্মেদ, তাঁর ভাই সৈয়দ সার্জিল আহম্মেদ, সার্জিলের ভায়রা ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি শাহ মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে ১৫ থেকে ২০ জন সশস্ত্র ব্যক্তি চকরপাড়ায় ত্রাস সৃষ্টি করেন। তাঁরা প্রথমে রোমানকে খুঁজতে থাকেন। রোমান ফোনে শরীফকে ডেকে নেয়। বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে রোমানকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। প্রতিবাদ করলে শরীফকেও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর ১০ থেকে ১২টি গুলি করে ঘটনাস্থল ছাড়েন তাঁরা। গুলিতে হোসেন নামের শরীফের এক বন্ধু আহত হন।

আমার ভাই সৈয়দ সার্জিলকে এ ঘটনায় ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র চলছে।
সার্জিলের বড় ভাই ও জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ কবির আহম্মেদ

শরীফের মা হেনা বেগম বলেন, রাত সাড়ে ১২টার দিকে হঠাৎ শরীফের ফোনে একটা কল আসে। সঙ্গে সঙ্গে ‘আমি আসতেছি মামা’ বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান তিনি। এরপর গুলির শব্দ। এরপর বাড়ি থেকে বের হয়ে তিনি দেখেন, সব শেষ। ছেলের রক্তভেজা লাশ রাস্তায় পড়ে আছে।

এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে সৈয়দ সার্জিল আহম্মেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর দুটি মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে সার্জিলের বড় ভাই ও জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ কবির আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাত সাড়ে ১২টার দিকে সার্জিলের প্রবাসী মেয়েকে নিয়ে আমার আরেক ভাতিজা গাড়ি চালিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় রাস্তায় মাতলামি করছিলেন বুলেট নামের এক বখাটে যুবক। একপর্যায়ে ওই যুবক আমার ভাতিজিকে উত্ত্যক্ত করলে তাঁরা (ভাতিজা ও ভাতিজি) কথা না বাড়িয়ে গাড়ি নিয়ে বাসায় চলে যায়। এ ঘটনার পর সার্জিল ও আমি শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহ মেহেদী হাসানের অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বিষয়টি জানাই। সেখানে অবস্থানকালেই হঠাৎ খবর আসে, চকরপাড়া এলাকায় দুই যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে সার্জিল ও শাহ মেহেদী হাসান এ খবর শুনে পরে হয়তো সেখানে গেছেন। কিন্তু বখাটে বুলেটের মাতলামির ঘটনার সঙ্গে এ হত্যাকাণ্ডের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। দুটি আলাদা ঘটনা। আমার ভাই সৈয়দ সার্জিলকে এ ঘটনায় ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র চলছে।’

এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ সার্জিল আহম্মেদের জড়িত থাকার অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইয়ান ওলিউল্লাহ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পূর্ববিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। লাশ দুটির ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।