যশোরে সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয় দখলে নিল ছাত্রদল-যুবদল
যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসংলগ্ন এলাকায় প্রতিষ্ঠিত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রভাতী সংঘের কার্যালয় দখল করে নিয়েছেন ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা–কর্মীরা। এখন প্রতিদিন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা–কর্মীরা এখানে ওঠাবসা করছেন ও আড্ডা দিচ্ছেন।
বেনাপোলের নিবন্ধিত একমাত্র এই সংগঠনের কার্যালয়টি দখল করে নেওয়ায় সংগঠনের সদস্যরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, প্রভাতী সংঘের কার্যালয়ের ভেতরেই সরগম সংগীত একাডেমি নামে সাংস্কৃতিক একটি সংগঠনের কার্যক্রমও চালানো হতো। সংগঠনটির কার্যালয় সংস্কারের কাজ চলছিল। এই কার্যালয়ের টিনশেড ভবনের ভেতরের দেয়াল সংস্কার করে রং করে রাখা হয়। এর মধ্যে গত ৫ আগস্ট বিএনপির কয়েকজন নেতা–কর্মী সেখানে গিয়ে প্রভাতী সংঘের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। এরপর ২০ সেপ্টেম্বর সকালে ক্লাবের দেয়ালে পৌর ছাত্রদলের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ক্লাবের দেয়ালে শার্শা উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব ইমদাদুল হকের ছবি–সংবলিত ফেস্টুন টাঙানো আছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রভাতী সংঘের কার্যালয় দখলের পর নতুন করে চেয়ার–টেবিল বসানো হয়েছে। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সেখানে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা–কর্মীরা জড়ো হয়ে আড্ডা দেন।
প্রভাতী সংঘের সর্বশেষ অনুমোদিত কমিটির সভাপতি ছিলেন বেনাপোল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুল আলম (লিটন) ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শার্শা উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মোস্তাফিজ্জোহা সেলিম। চলতি বছরে নবগঠিত কমিটির সভাপতি মনোনীত হয়েছেন শার্শা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সালমা আলম ও সাধারণ সম্পাদক রাশিদুজ্জামান রাশু। যদিও নতুন কমিটি সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে এখনো অনুমোদন পায়নি।
নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাশিদুজ্জামান বলেন, ‘প্রভাতী সংঘ কার্যালয়ে সংস্কারকাজ চলছিল। আমরা ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠানের ঘরের দেয়াল সংস্কার করে রং করেছি। এর মধ্যে ৫ আগস্ট বিএনপির এক কর্মী আমাকে বলেন, এখন থেকে প্রভাতী সংঘ আমরাই চালাব। এরপর তিনি ক্লাবের দরজায় একটি তালা ঝুলিয়ে দেন।’
শার্শা উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব ইমদাদুল হক প্রভাতী সংঘের কার্যালয় দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই ক্লাবে আগে আওয়ামী লীগের লোকজন ওঠাবসা করতেন। ৫ আগস্টের পর তাঁরা চলে গেছেন। এখন আমরা বসছি। এত দিন আওয়ামী লীগের নেতা আশরাফুল আলম ও সালমা আলমদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। দলীয় কোন্দলের কারণে দীর্ঘদিন ধরে কেউ ওঠাবসা করতেন না। এখন সেখানে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা–কর্মীরা ওঠাবসা করছেন।’
প্রভাতী সংঘের অনুমোদিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সরগম সংগীত একাডেমির সভাপতি মোস্তাফিজ্জোহা সেলিম বলেন, ‘বেনাপোল শূন্যরেখায় একুশে ফেব্রুয়ারি ভোরে দুই বাংলা মিলনমেলায় সাংস্কৃতিক যে আয়োজন করা হয়, তা মূলত সরগম সংগীত একাডেমিই করে আসছে। ৩০ থেকে ৪০ জন শিল্পী নিয়মিত এই সংগঠনে সংগীত চর্চা করেন। যদিও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে কয়েক বছর ধরে সরগমের কার্যক্রম প্রভাতী সংঘের কার্যালয় থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। ভালো পরিবেশ পেলে প্রভাতী সংঘেই সরগমের কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।’
মোস্তাফিজ্জোহা সেলিম বলেন, ‘১৯৭২ সালে সরকারি খাসজমিতে প্রভীত সংঘ নামে একটি সমাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তোলেন স্থানীয় বেনাপোল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক কওছার আলী, আতাহার আলী প্রমুখ। সেই প্রতিষ্ঠানটি রাজনৈতিক দলাদলির কারণে শেষ হয়ে গেল। সামাজিক এই প্রতিষ্ঠানটি সগৌরবে তার অস্তিত্ব ফিরে পাবে বলে আমি আশাবাদ ব্যক্ত করছি।’