কুষ্টিয়া থেকে লোহার ভাঙারি বোঝাই করে রাজধানীর একটি কারখানায় যাচ্ছিলেন ট্রাকের মালিক মো. নাজমুল হোসাইন। আজ বুধবার সকালে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ার পাঁচ নম্বর ফেরিঘাটের পন্টুনে দাঁড়িয়ে পদ্মা নদীর দিকে হতাশার দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন তিনি।
ফেরিডুবির ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে নাজমুল হোসাইন জানান, গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে রজনীগন্ধা ফেরি পাটুরিয়ার দিকে ছেড়ে আসে। ফেরিটিতে তাঁর ট্রাকসহ মোট নয়টি মালবাহী ট্রাক ছিল। তিনি বলেন, ‘ধারদেনা করে ট্রাকটি কিনেছিলাম। এখনো দেনার টাকা পরিশোধ করতে পারি নাই। ট্রাকের ভাড়ার টাকায় সংসার চলে। এহন ট্রাক ডুবে যাওয়ায় আমার সব ডুবে শেষ হয়ে গেল।’
ফেরিতে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী ফজর আলী বলেন, পাটুরিয়া ঘাটের অদূরে নোঙর করে রাখা হয় ফেরিটি। এ সময় তিনি ফেরিতেই ছিলেন। সকাল ছয়টার দিকে ফেরিতে থাকা একজন বলতে থাকেন ফেরিতে পানি উঠছে। তখন ফেরির নোঙর খুলে দেয়। কিছুক্ষণ পর ফেরিটি চালু করা হলেও ততক্ষণে পানি উঠে ফেরিটি কাত হয়ে ডুবে যেতে থাকে। এরপর সকাল আটটার দিকে ফেরিটি পানিতে তলিয়ে যায়। তিনি দাবি করেন, অন্য কোনো ফেরি বা নৌযানের ধাক্কার কোনো ঘটনা ঘটেনি।
ফেরিটিতে থাকা এক ট্রাকচালক বলেন, আজ ভোর চারটার দিকে ফেরিতে পানি উঠতে থাকে। এ সময় ফেরির লোকজন পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করতে থাকেন। ধীরে ধীরে এক পাশ কাত হয়ে ফেরিটি ডুবতে থাকে। একপর্যায়ে সকাল আটটার দিকে ফেরিতে থাকা সব মালবাহী ট্রাকসহ ফেরিটি পানিতে তলিয়ে যায়। এ সময় তাঁরা যে যাঁর মতো নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে তীরে ওঠেন।
ফেরি রজনীগন্ধার স্টাফদের বরাত দিয়ে বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম-বাণিজ্য) শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে ফেরিটি নদীতে নোঙর করে ছিল। সকাল আটটার দিকে বালুবাহী একটি বাল্কহেড ফেরিটিকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। এরপরই এক পাশ কাত হয়ে ফেরিটি নদীতে ডুবে যায়। তবে ঘন কুয়াশার কারণে বাল্কহেডটি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। ফেরিডুবির প্রায় চার ঘণ্টা পর আজ দুপুর ১২টার দিকে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তবে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকেও উদ্ধারকাজ শুরু হয়নি।
বিআইডব্লিউটিসি, মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত একটার দিকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া প্রান্ত থেকে পাটুরিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে আসে ইউটিলিটি (ছোট) ফেরি রজনীগন্ধা। ফেরিটিতে সাতটি ছোট ও বড় দুটি মালবাহী ট্রাক ছিল। রাত দেড়টার দিকে ঘন কুয়াশার কারণে পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ঘাটের অদূরে পদ্মা নদীতে আটকা পড়ে ফেরিটি। এ সময় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে চলাচল বন্ধ থাকে। আজ সকাল আটটার পরপর ফেরিটি ডুবে যেতে থাকে। এ সময় যানবাহনের চালক, সহকারী এবং ফেরিতে কর্মরত লোকজন দ্রুত নদীতে ঝাঁপ দেন।
খবর পেয়ে লোকজন ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ট্রলার নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এর আগে নদীতে ঝাঁপ দেওয়া কয়েকজন সাঁতরে নদীর তীরে ওঠেন। এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ছয়জনকে উদ্ধার করে তীরে নিয়ে আসেন। ততক্ষণে ফেরিটি যানবাহন নিয়ে তলিয়ে যায়।