দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়ক উঁচু–নিচু, ঘটছে দুর্ঘটনা
সওজ ৩ বছর আগে ১০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এই মহাসড়ক নির্মাণ করে। এই মহাসড়কের ৬৬ কিলোমিটারের বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
শহরে কাজ শেষে মোটরসাইকেলে করে বাড়িতে ফিরছিলেন জুয়েল হোসেন (৩২)। পেছন থেকে কানে আসে দ্রুতগামী ট্রাকের হর্ন। হাতের বাঁ দিকে ঘুরতেই মোটরসাইকেলের সামনের চাকা সড়কের উঁচু অংশে হোঁচট খায়। এতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় ১৫ হাত দূরে ছিটকে পড়েন জুয়েল। মাথার ডান দিকের মাত্র এক হাত দূর দিয়ে চলে যায় দ্রুতগামী ট্রাক। ট্রাকের চাকা থেকে অল্পের জন্য মাথা বেঁচে যায়। কিন্তু পা ও বুকে গুরুতর আঘাত পেয়ে হাসপাতাল ও বাড়ির বিছানায় কাটাতে হয় দুই মাস।
জুয়েল হোসেনের বাড়ি দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কাটলা ইউনিয়নে। দুই মাস আগে ফুলবাড়ি শহর থেকে ব্যক্তিগত কাজ শেষে বাড়িতে ফিরছিলেন। পথে দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কের জয়নগর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন তিনি। পিচঢালাই উঠে যাওয়ায় এবং দেবে যাওয়ায় জুয়েলের মতো এই সড়কে প্রতিদিনই কেউ না কেউ দুর্ঘটনায় আহত হচ্ছেন।
বিরামপুর থানা সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের বিরামপুর এলাকায় পাঁচজন নিহত এবং দুই নারীসহ সাতজন আহত হয়েছেন।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, দিনাজপুর শহর থেকে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ পর্যন্ত এই সড়কের দৈর্ঘ্য ১০৬ কিলোমিটার, প্রস্থ ৪২ ফুট। মহাসড়কটি ৮৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত। ৮টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৮ সালের ১ জুলাই নির্মাণকাজ শুরু করে ৯টি গুচ্ছের মাধ্যমে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কের ঢাকা মোড় থেকে গোবিন্দগঞ্জ চারমাথা মোড় পর্যন্ত প্রায় ৬৬ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা বেশি খারাপ। এই মহাসড়ক নির্মাণের শুরুর দিকে এলাকার সাধারণ মানুষ ও পরিবহন ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তিরা অনেক খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু নির্মাণের দুই বছরের মাথায় সড়কের বিভিন্ন স্থান দেবে যাওয়া শুরু করে। কোথাও কোথাও সড়ক উঁচু হয়ে যায়। আবার কোথাও কোথাও বড় বড় গর্ত তৈরি হয়। এসব কারণে মহাসড়ক পথচারীদের জন্য অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কের ফুলবাড়ির ঢাকা মোড় থেকে দক্ষিণে আম্রবাটি মাদ্রাসা মোড়, লক্ষ্মীপুর বাজার থেকে জয়নগর বাজার, চন্ডিপুর বাজার থেকে দুর্গাপুর ঢিবি, বিরামপুর পৌর শহরের ঢাকা মোড়, মির্জাপুরের ব্র্যাক চিলিং সেন্টার থেকে ঘোড়াঘাট রেলঘুমটি পর্যন্ত কোথাও কোথাও সড়ক উঁচু হয়ে আছে। পিচঢালাই উঠে কোথাও কোথাও খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এতে মহাসড়কের এসব স্থান দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স, পণ্যবাহী পরিবহন, ইজিবাইক, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ। সন্ধ্যার পর মহাসড়কের এসব এলাকা দিয়ে চলাচল করা আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, যত্রতত্র উঁচু হয়ে থাকায় এসব অংশ দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে মোটরসাইকেল উল্টে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। মহাসড়ক চার লেন হওয়াতে পরিবহনগুলো দ্রুতগতিতে ও নিরাপদে চলাচল করার কথা। কিন্তু সড়ক বেহাল হওয়ায় এসব যান এখন ধীরগতিতে চলাচল করে।
বিরামপুর থেকে ফুলবাড়ি শহরে নিয়মিত সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালান আকবর আলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিরামপুর শহরোততে ফুলবাড়ি শহরোত যাতে সড়কের ম্যালা জাগাত তো রাস্তা উঁচা হইচে, গর্ত হইচে। রাস্তাত রাস্তাত বড় ট্রাক আর বাসোক (বাস) সাইড দিবার গেলে তো ওই উঁচা অংশের উপরে গাড়ি তুলে দিবার নাগে।’
মহাসড়কটির বিরামপুর উপজেলার অংশে দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ অফিস থেকে দক্ষিণে বিরামপুর শহর হয়ে বিজুলবাজার পর্যন্ত প্রায় ১১ কিলোমিটার সড়কের কাজ করেছে আমিনুল ইসলাম প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প পরিচালক সমীর কুমার বণিক বলেন, ‘সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার পরবর্তী দুই বছর ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ওই সড়কের সংস্কার করে দেওয়ার চুক্তি থাকে। দুই বছরের মধ্যে মহাসড়কে যেখানে যেখানে সমস্যা হয়েছিল, আমরা সেসব স্থান সংস্কার করেছি। এখন দুই বছর পার হয়েছে। আমাদের আর ওই কাজ করার সুযোগ নেই। ’
দিনাজপুর সড়ক বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘মহাসড়ক নির্মাণের কাজ এখনো চলমান রয়েছে। কোনো কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের অংশের কাজ শেষ করেছে। তবে কাজ শেষে সড়ক সংস্কারে প্রতিটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জন্য তিন বছর ডিপিএল (ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড) থাকে। মহাসড়কে এ রকম কোনো সমস্যা থাকলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেই জায়গায় সংস্কারকাজ করার চেষ্টা করা হবে।’