চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে গঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের তদন্ত কমিটির ডাকে সাড়া দেননি সাবেক উপাচার্য শিরীণ আখতার। আজ রোববার কমিটির সদস্যরা ক্যাম্পাসে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকলেও সাবেক এই উপাচার্য আসেননি। অসুস্থ থাকায় তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হতে পারবেন না বলে কমিটির সদস্যদের জানিয়েছেন তিনি।
চলতি বছর ৩১ জানুয়ারি এক ভবন উদ্বোধনে ৪৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা খরচের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হয়ে তিন সদস্যের এ কমিটি গঠন করেছিল ইউজিসি। দুই দফা খরচের ব্যাখ্যা চেয়ে সন্তোষজনক উত্তর না পেয়ে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। পাশাপাশি এ কমিটিকে আরও তিনটি বিষয় খতিয়ে দেখার জন্য বলা হয়। এগুলো হলো বাংলা ও আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের কার্যক্রম যথাযথ হয়েছে কি না; বিজ্ঞাপন দিয়ে দুই মন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানানোর খরচ এবং গত বছর ৪ জুন সেমিনারের খরচ কীভাবে হয়েছে।
কমিটি গঠনের প্রায় সাড়ে চার মাস পর তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসেন সদস্যরা। আজ রোববার দিনব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম, সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক নূরুল আজিম সিকদার, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল ফারুক, আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক রকিবা নবী, বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক তাসলিমা বেগম, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ, ভারপ্রাপ্ত হিসাব নিয়ামক মো. আমিরুল ইসলাম, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. আলতাফ উল আলমের সাক্ষাৎকার নেয় কমিটি। পাশাপাশি এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও বিভাগের শিক্ষকদের সাক্ষাৎকারও নেওয়া হয়।
জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাবেক উপাচার্য অসুস্থ থাকায় সাক্ষাৎকার দিতে আসতে পারবেন না বলে জানান। তিনি সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য পরে মঞ্জুরি কমিশনে যাবেন বলেও জানিয়েছেন। তবে ঘটনাসংশ্লিষ্ট অনেকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।’
যেসব কারণে তদন্ত কমিটি
গত বছর ১৬ ডিসেম্বর প্রথম আলো অনলাইনে ‘এক ভবন উদ্বোধনেই সাড়ে ৪৪ লাখ টাকা খরচ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের একাডেমিক ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ খরচ দেখানো হয়।
ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের এই একাডেমিক ভবন সে বছর ৪ জুন উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। প্রথম আলোতে এ সংবাদ প্রকাশের পর গত ১০ জানুয়ারি ও ১৯ ডিসেম্বর উদ্বোধনের খরচ কীভাবে করা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তা জানতে চেয়েছিল কমিশন। বিশ্ববিদ্যালয়ও দুই দফা এ জবাব দেয়। তবে কমিশন এ জবাবে সন্তুষ্ট হয়নি।
অন্যদিকে গত বছর ১৫ ডিসেম্বর প্রথম আলোর অনলাইনে ‘শিক্ষার্থীর চেয়ে কম যোগ্যতা চেয়ে বিজ্ঞপ্তি, শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ সংবাদের সূত্র ধরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাখ্যা চায় ইউজিসি। পাশাপাশি সংবিধি না মেনে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করায় আইন ও বাংলা বিভাগের নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করার অনুরোধ করে কমিশন।
গত বছরের ৪ জুন ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য শিরীণ আখতার এ সেমিনার আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। এ সেমিনার আয়োজনের জন্য ৩১ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজস্ব খাত থেকে ১৮ লাখ টাকা তোলেন প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার। এ নিয়ে প্রথম আলোতে ১৭ জানুয়ারি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেমিনারের এ খরচ কোন খাতে করা হয়েছে, তদন্ত করছে কমিশন।
অন্যদিকে ১৭ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা না মেনে দুই মন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেন উপাচার্য শিরীণ আখতার। ১২ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে নবনিযুক্ত মন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা না জানাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এ নির্দেশনা না মেনে কেন বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে, আর এ বিজ্ঞাপনের টাকা কোন খাত থেকে দেওয়া হচ্ছে, তা জানতে চেয়েছিল কমিশন। পরে ১৯ জানুয়ারি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, এ বিজ্ঞাপনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো আর্থিক সংশ্লিষ্টতা নেই।