বরিশালে নিপাহ ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে পুলিশ সদস্যের মৃত্যু
বরিশালে নিপাহ ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে পলাশ মোল্লা (২২) নামের এক পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
পলাশ মোল্লা পিরোজপুর জেলা পুলিশ লাইনসে কনস্টেবল পদে কর্মরত ছিলেন। তাঁর বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলার ওলিমারা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের অলিউর মোল্লার ছেলে। পলাশ মোল্লা নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন বলে ধারণা করছেন চিকিৎসকেরা। এ জন্য তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে তাঁর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এইচ এম সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আগামীকাল সোমবারের মধ্যে ঢাকা থেকে প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। এরপর নিশ্চিত হওয়া যাবে পলাশ মোল্লা নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন কি না। তবে তাঁর নিপাহ ভাইরাসের উপসর্গের মধ্যে তীব্র জ্বর, খিঁচুনি, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া—এসব উপসর্গ ছিল।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, পলাশ মোল্লা অসুস্থ হয়ে গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিট-১-এ ভর্তি হন। পরে তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন হলে ওই দিন সন্ধ্যায় তাঁকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়। তীব্র শ্বাসকষ্ট আর খিঁচুনির কারণে সেখানে তাঁকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্র দিয়ে (লাইফ সাপোর্ট) রাখা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ সদস্যের মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
পলাশ মোল্লার শ্যালক মো. ফিরোজ আলম বলেন, পলাশ দেড় মাস আগে খেজুরের রস পান করেছিলেন। এরপর গতকাল তাঁর অস্বাভাবিক জ্বর আসে। পরে ওই দিনই তাঁকে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে ওই দিনই তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল।
এবার শীতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছিল না বলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ অনেকটাই স্বস্তিতে ছিল। এই স্বস্তির মধ্যেই হঠাৎ অস্বস্তি নিয়ে এসেছে নিপাহ ভাইরাস। পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের সব জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। আইইডিসিআরের এমন ঘোষণার পর নিপাহ ভাইরাসের ব্যাপারে বৃহত্তর বরিশালে বিশেষ সর্তকবার্তা জারি করে বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগ। ৫ ফেব্রুয়ারি বরিশাল বিভাগের সব জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের কাছে চিঠির মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাসের বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, যেহেতু নিপাহ ভাইরাস খেজুরের রস ও বাদুড়ের মাধ্যমে ছড়ায়, তাই বরিশালে এর ঝুঁকি কিছুটা বেশি। কারণ, বরিশালের অধিকাংশ এলাকায় পর্যাপ্ত খেজুরের রস উৎপাদিত হয়। ফলে বাদুড়ের উপদ্রব থাকাটাই স্বাভাবিক। এ কারণে খেজুর রসের মৌসুম শেষ না হওয়া পর্যন্ত মানুষকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের উপপরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিভাগে সব স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠানে সতর্কবার্তা পৌঁছে দিয়েছি। দক্ষিণাঞ্চলে পর্যাপ্ত খেজুরের রস উৎপাদিত হয়। সুতরাং ঝুঁকির দিক থেকে বরিশাল অনেক বেশি এগিয়ে। তাই কাঁচা খেজুরের রস খেতে সম্পূর্ণ নিষেধ করা হয়েছে। এ ছাড়া কোনো ফলে যদি পাখির কামড়ের মতো দেখা যায়, তাহলে সেসব ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।’