দেশের এক ইঞ্চি মাটিও কাউকে ছাড় দেবেন না নুখিংসাই মারমা
বান্দরবানের দুর্গম এলাকায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা নুখিংসাই মারমার। ছোটবেলা থেকেই দেশের জন্য কাজ করার স্বপ্ন ছিল তাঁর। কৃষক বাবার মেয়ে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পড়ালেখা করতে আসেন বান্দরবান সদরে। এরপর যোগ দেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি)। সৈনিক হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর শুরু হয় ছয় মাসের প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণে বিজিবির শ্রেষ্ঠ নারী সৈনিক নির্বাচিত হন নুখিংসাই। গতকাল মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে ১০২তম রিক্রুট ব্যাচের সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে তাঁর হাতে তুলে দেন পুরস্কার।
পাহাড়ের দুর্গম অঞ্চলের মেয়ে নুখিংসাইর মনোবল আর সাহস দুটিই তাঁর জনপদের পাহাড়চূড়ার মতোই উঁচু। শ্রেষ্ঠ নারী সৈনিক হওয়ার পর প্রথম আলোকে যে কথা বলেন, তাতেই তাঁর দৃঢ়চেতা মনোভাবের পরিচয় মেলে। পুরস্কার হাতে নিয়ে নুখিংসাই প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের এক ইঞ্চি মাটিও কাউকে ছাড় দেব না। নিজের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করব দেশের ভূখণ্ড রক্ষায়।’
১০২তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ গত ৩০ জুলাই চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতের বিজিটিসিএন্ডসিতে শুরু হয়। প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে মোট ৬৯৫ জন রিক্রুটের মধ্যে ৬৪৯ জন পুরুষ ও ৪৬ জন নারী রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষ করেন।
নুখিংসাই মারমার বাড়ি বান্দরবানের দুর্গম এলাকায়। ছোটবেলায় মাইলের পর মাইল হেঁটে গিয়ে স্কুলে পড়েছেন। মা–বাবা পরে তাঁকে বান্দরবান সদরে এনে পড়াশোনা করান। তাঁদের স্বপ্ন ছিল, নুখিংসাই এমন একটা জায়গায় পৌঁছাবেন, যা নিয়ে তাঁরা গর্ব করবেন।
নুখিংসাই মারমা প্রথম আলোকে বলেন, মা-বাবার উৎসাহে বিজিবিতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন বুনতে থাকেন। এটিকে বাস্তবে রূপ দিতে কঠোর পরিশ্রম করেছেন তিনি। পদে পদে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন। প্রশিক্ষণ সব সময় চ্যালেঞ্জের। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই এসেছেন তিনি। যেদিন এই ট্রেনিং সেন্টারে পা রাখেন, সেদিনই মনে আশা ছিল, সবার মধ্যে তিনি শ্রেষ্ঠ হবেন। সেই অনুযায়ী কাজ করেছেন। ট্রেনিংয়ের প্রতিটি বিষয় রপ্ত করেছেন। মাঝেমধ্যে ভেঙে পড়লেও স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিজেকে আবার গড়েছেন নুখিংসাই।
নুখিংসাই মারমা বান্দরবান জেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকার একজন অতিসাধারণ কৃষকের মেয়ে। তাঁর মা একজন গৃহিণী। তাঁরা তিন বোন। তাঁদের মধ্যে নুখিংসাই মারমা সবার ছোট। তিনি বান্দরবান কালেক্টরেট কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। পরে বিজিবিতে সৈনিক হিসেবে প্রশিক্ষণ শুরু করেন।
চ্যালেঞ্জিং এ পেশা কেন বেছে নিলেন, জানতে চাইলে নুখিংসাই মারমা বলেন, দেশের জন্য কাজ করার সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকা। পুরুষ সহকর্মীর পাশাপাশি সীমান্ত পাহারা দেব। বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষায় শপথবদ্ধ।
মেয়ে প্রশিক্ষণে শ্রেষ্ঠ সৈনিক নির্বাচিত হওয়ায় খুশি নুখিংসাইয়ের বাবা উচিংসং মারমা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিজিবিতে সুযোগ পাওয়ার পর তাঁর মেয়েকে নিয়ে গ্রামবাসী গর্ব করে। তিনি নিজেও গর্বিত তাঁর মেয়েকে নিয়ে। তাঁর তিন মেয়ের মধ্যে সবার ছোট নুখিংসাই। আদরের ছোট মেয়ে দেশের সীমান্ত পাহারা দেবে, এটি ভাবতেই গর্বে তাঁর বুক ভরে ওঠে।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ৬৪৯ জন পুরুষ ও ৪৬ জন নারী রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষ করেছেন। এর মধ্যে নুখিংসাই মারমা শ্রেষ্ঠ নারী সৈনিক নির্বাচিত হয়েছেন। প্রশিক্ষণ শেষ করা সৈনিকদের সীমান্তে দায়িত্ব বণ্টন করা হবে।
নুখিংসাই মারমার কাছে শেষ কথা কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি চাই আমার মতো অন্য নারীরা এমন পেশায় এগিয়ে আসুক।’