টাঙ্গাইলে কাদের সিদ্দিকীর প্রশংসা করলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী, জোটে ভেড়ার ইঙ্গিত
মুক্তিযুদ্ধকালে কাদেরিয়া বাহিনীর বঙ্গবন্ধুর কাছে অস্ত্র জমা দেওয়ার ঘটনার ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখার জন্য কাদের সিদ্দিকীর ভূয়সী প্রশংসা করেন আ ক ম মোজাম্মেল হক।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। তবে একজন মন্ত্রী ও একজন কেন্দ্রীয় নেতা ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় বিষয়টি নিয়ে টাঙ্গাইলে ব্যাপক আলোচনা চলছে। সাধারণ মানুষ মনে করছেন, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ঐক্য হচ্ছে। এ কারণে একজন মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্য ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন।
গত ২৩ ডিসেম্বর কাদের সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সপরিবার গণভবনে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন। তার পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়, তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে যাচ্ছেন। ওই সাক্ষাতের পর এটিই ছিল কাদের সিদ্দিকীর টাঙ্গাইলে প্রথম কোনো সভা।
অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা কালিহাতীর পটল গ্রামের মোস্তাক হোসেন বলেন, মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতার বক্তব্য শুনে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে তাদের জোট হচ্ছে।
সরকার ও দলের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন বলে আয়োজকেরা জানিয়েছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত দলের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য কাদের সিদ্দিকীর বড় ভাই আবদুল লতিফ সিদ্দিকীও ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
সভায় কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আদর্শে পথ চলতে চাই। বাংলার বাপ একটাই। তিনি হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর আমি এতিম হয়েছি। এতে আমার, আমার ভাই ও পরিবারের অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে।’
কাদের সিদ্দিকী বলেন, ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে যে অস্ত্র জমা দিয়েছিলাম, তা নতুন প্রজন্ম জানেই না। সেই স্মৃতি ধরে রাখতে স্মৃতিস্তম্ভ করার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তিনি। অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি অনুষ্ঠানে আসতে অপারগতা প্রকাশ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন কাদের সিদ্দিকী।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘কাদের সিদ্দিকী ইতিহাসের গর্বিত সন্তান। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বীরত্বগাথা ইতিহাসে বিরল। যুদ্ধ শেষে বিজয়ী হয়ে তিনি এক লাখ চার হাজার অস্ত্র বঙ্গবন্ধুর কাছে জমা দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ সৃষ্টিতে কাদেরিয়া বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সম্পর্কে যে মনোভাব প্রকাশ, তা আমার জন্য বিব্রতকর। আমরা এই অনুষ্ঠানকে জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে দেখতে চাই। সম্পর্কের কোনো অবনতি থাকলে তা জাতীয়ভাবে নিতে চাই না। জাতীয়ভাবে আমরা মনে করি, এটি একটি ঐতিহাসিক দিন।’
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, এটা জেলার বিষয় নয়, কেন্দ্রের বিষয়। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ যে সিদ্ধান্ত নেবে, তাঁরা তা মেনে নেবেন।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস বলেন, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাঁকে এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। তাই তিনি এখানে এসেছেন। তিনি কাদের সিদ্দিকীর উদ্দেশে বলেন, ‘আসুন, আমরাও আপনাকে নিয়ে পথ চলতে চাই। ২০২৪ সালে যে নির্বাচন হবে, ওই নির্বাচনে এক বৃত্তে থাকবেন মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানীরা। সার্থক পিতার সার্থক উত্তরসূরি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে লড়ব।’
আজ মঙ্গলবার টাঙ্গাইল শহীদ মিনার চত্বরে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে কাদেরিয়া বাহিনীর অস্ত্র জমাদান দিবস উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক আবু মোহাম্মদ এনায়েত করিম সভাপতিত্ব করেন। এতে বক্তব্য দেন সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, বীর মুক্তিযোদ্ধা কবি বুলবুল খান মাহবুব, আল মুজাহিদী, কাদের সিদ্দিকীর সহধর্মিণী নাসরিন সিদ্দিকী, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হক, জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবদুস ছালাম চাকলাদার, আবুল কালাম আজাদ বীর বিক্রম, হাবিবুর রহমান তালুকদার বীর প্রতীক প্রমুখ।