পৌনে ৮ লাখ টাকায় মাদক কারবারিকে ছাড়, ‘শাস্তি’ পেতে যাচ্ছেন ডিবির কর্মকর্তারা
রাজধানীর মিরপুরের একটি আবাসিক হোটেলে মাদক কারবারিকে আটকে ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপপরিদর্শক আমিরুল ইসলাম শাস্তি পেতে যাচ্ছেন। বর্তমানে পুলিশ সদর দপ্তরে প্রশিক্ষণে থাকা আমিরুলকে প্রশিক্ষণ বাতিল করে বগুড়ায় ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
আজ রোববার বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী পুলিশের সদর দপ্তরে ওই চিঠি দেন। বিকেল চারটার দিকে পুলিশ সুপার নিজেই প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, অনুমতি ছাড়া ডিবির একটি দল নিয়ে রাজধানীর আবাসিক হোটেলে মাদক কারবারিকে আটকের পর ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় ডিটিএস (ডিটেকটিভ ট্রেনিং স্কুল) প্রশিক্ষণ বাতিল করে এসআই আমিরুলকে বগুড়ায় ফেরত পাঠানোর জন্য পুলিশের সদর দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ফেরত আসার পর ওই এসআইসহ জড়িত অন্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ১২ মে রাজধানীর মিরপুর-২ নম্বরের বড়বাগ এলাকার গেস্ট হাউস নামের আবাসিক হোটেলে মাদক কারবারি রুবেল ওরফে পিচ্চি রুবেলকে আটকের পর টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে এসআই আমিরুল ইসলামসহ বগুড়া ডিবির পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে। পিচ্চি রুবেলের বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায়। তাঁর বিরুদ্ধে মুক্তাগাছা থানায় তিনটি মাদক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ওই মাদক কারবারির কাছ থেকে আদায় করা টাকার পুরোটাই ফেরত দিয়েছেন ডিবি পুলিশের সদস্যরা। তবে ঘটনার দেড় মাস পরও জড়িত পুলিশের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ নিয়ে গতকাল শনিবার প্রথম আলো অনলাইনে ও আজ রোববার ছাপা পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর নড়েচড়ে বসে জেলা পুলিশ। অভিযুক্ত ডিবির সদস্যরা সাময়িক বরখাস্ত হতে পারেন বলে জেলা পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বগুড়া ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুস্তাফিজ হাসান প্রথমে অভিযুক্ত আমিরুলের সাফাই গেয়ে বলেন, এসআই আমিরুলের সোর্স (তথ্যদাতা) ছিলেন রুবেল। তথ্যপ্রাপ্তির জন্য আমিরুল তাঁকে দেড় লাখ টাকা দিয়েছিলেন; কিন্তু ওই ব্যক্তি তথ্যও দিচ্ছিলেন না, আবার টাকাও ফেরত দিচ্ছিলেন না। এ জন্য তাঁকে আটক করে কিছু টাকা আদায় করেছিলেন আমিরুল। তবে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়টি তাঁর জানা নেই।
মুস্তাফিজ হাসান আজ প্রথম আলোকে বলেন, বিনা অনুমতিতে জেলায় কিংবা জেলার বাইরে ডিবির দল নিয়ে অভিযানে যাওয়ার সুযোগ নেই। কোথাও অভিযানে যেতে হলে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে যেতে হবে। আমিরুলের নেতৃত্বে ডিবির দলটি ঢাকায় গেলেও কোনো অনুমতি নেয়নি। পরে বিষয়টি জানাজানি হয়। ৩০ জুন থেকে এসআই আমিরুল ইসলাম ৩৬ কার্যদিবসের ডিটিএস প্রশিক্ষণে যাওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে এত দিন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।