মোস্তফা তারেক ওরফে সিয়াম নামের এক ছাত্রের মৃত্যুতে মেডিকেল সেন্টার ও পরিবহন পুলের গাফিলতির অভিযোগ তুলে গতকাল বুধবার মধ্যরাতে বিক্ষোভ করে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেন এবং পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে অবস্থান নেন।
শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এ সময় ছয় দফা দাবি পেশ করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তরফ থেকে শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে বৈঠকের আশ্বাস দিলে তাঁরা হলে ফিরে যান। আজ বেলা ১১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বৈঠক চলছিল জানান প্রক্টর আরিফুর রহমান।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ফুটবল খেলা শেষে ক্যাম্পাসে পুকুরে গোসল করেন শিক্ষা প্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোস্তফা তারেক ওরফে সিয়াম (২২)। গোসল শেষে তিনি তার আবাসিক হলে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিক সহপাঠীরা তাকে নিয়ে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে। সেখানে কর্তব্যরতরা জানান, মেডিকেল সেন্টারের অ্যাম্বুলেন্স মেরামতের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। পরে বিকল্প ব্যবস্থায় মাইক্রোবাসে করে তাঁকে জেলা শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
সূত্র জানায়, রাত আনুমানিক সাড়ে নয়টার দিকে নিহত শিক্ষার্থীর লাশ হাসপাতাল থেকে ক্যাম্পাসে নেওয়া হয়। সেখানে সহপাঠী ও অন্যান্য শিক্ষার্থীদের কান্নাকাটিতে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তখন শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের গাফিলতির অভিযোগ তোলা হয়। একই সঙ্গে পরিবহন বিভাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তারা। শিক্ষার্থীদের দাবি মেডিকেল সেন্টারে অক্সিজেন না থাকায় এবং গাড়ি আসতে দেরি হওয়ায় সঠিক সময় সিয়ামকে হাসপাতালে নেওয়া যায়নি। এতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
রাত ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরার সিয়ামের মৃত্যুর ঘটনায় মেডিকেল সেন্টার ও পরিবহন বিভাগের গাফিলতির প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। তারা এ সময় মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীরা এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্দেশে ছয় দফা দাবি পেশ করেন। দাবিগুলো হলো, তারেক সিয়ামের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মেডিকেল সেন্টার ও পরিবহনপুরকে দায় নিয়ে প্রশাসনিক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; সেই সঙ্গে সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। মেডিকেল সেন্টার ও অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস পরিপূর্ণভাবে চালু করতে হবে। তিনটি ইমারজেন্সি অ্যাম্বুলেন্স ও সার্বক্ষণিক দুজন এমবিবিএস ডাক্তার থাকতে হবে। সর্বপ্রকারের ওষুধ মজুত রাখতে হবে। প্রত্যেক হলে ফার্স্ট এইড এবং অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখতে হবে। দোষী চিকিৎসককে প্রকাশ্য জবাবদিহি ও ক্ষমা চাইতে হবে এবং বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। মাইজদী হাসপাতাল রোড সাত দিনের মধ্যে সংস্কার করতে হবে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, এসব দাবি নিয়ে তাঁরা মধ্যরাত পর্যন্ত শহীদ মিনার চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রক্টরসহ জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা তখন আজ সকালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বসে দাবি-দাওয়াগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করে হলে ফিরে যান। পরে আজ সকাল ১০টায় উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের বৈঠক শুরু হয়।
প্রক্টর আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তারেক সিয়াম নামের একজন ছাত্র গতকাল সন্ধ্যায় হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা তাঁদের কিছু দাবি-দাওয়া নিয়ে ক্যাম্পাসে রাতে বিক্ষোভ মিছিল করেন এবং শহীদ মিনার চত্বরে অবস্থান নেন। পরে তিনিসহ জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে আলোচনার মাধ্যমে দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলে তাঁরা শান্ত হন। এখন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বৈঠক চলছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে।