ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে অচলাবস্থা অব্যাহত, কর্মবিরতি বাড়ল আরও তিন দিন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে আইনজীবীদের কর্মবিরতিতে চলছে না বিচারিক কার্যক্রম
ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতের জেলা জজসহ দুই বিচারকের অপসারণ এবং নাজিরের শাস্তির দাবিতে আইনজীবীদের কর্মবিরতি তৃতীয় দফায় আরও তিন দিন বাড়ানো হয়েছে। আগামী রবি থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত চলবে এ কর্মবিরতি। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া তিনটার দিকে সাধারণ সভা শেষে সাংবাদিকদের সামনে নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।

এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট ও ঢাকা বারের আইনজীবীদের একটি দল আজ রাতে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তাদের ডেকেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।

আরও পড়ুন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণ, বিচারকের নামে কুরুচিপূর্ণ স্লোগানসহ বিচারকাজে বিঘ্ন ঘটনোর অভিযোগে ২ দফায় ২৪ আইনজীবীকে উচ্চ আদালতে তলব করা হয়েছে। এর মধ্যে এজলাসে ঢুকে বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণের ঘটনায় বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক–আল-জলিলের বেঞ্চ ৬ জানুয়ারি জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ তিন আইনজীবীকে ১৭ জানুয়ারি আদালতে হাজির হয়ে ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন। আর এজলাস চলাকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ শারমিন নিগারের নামে কুরুচিপূর্ণ স্লোগান ও বিচারকাজ বিঘ্নিত করার অভিযোগে ১০ জানুয়ারি জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ ২১ আইনজীবীর প্রতি আদালত অবমাননার রুল দেন বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। তাঁদের ২৩ জানুয়ারি উচ্চ আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে এক দিনের কর্মবিরতি পালন করে জেলা বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন। এ জন্য গত বুধবার থেকে আজ পর্যন্ত সাত কর্মদিবসে জেলার কোনো আদালতেই বিচারিক কার্যক্রম চলেনি। এতে দুর্ভোগে পড়েন প্রায় দেড় লাখ বিচারপ্রার্থী।

আরও পড়ুন

গত বৃহস্পতি, শনি ও সোমবার প্রথম দফায়, মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফায় আইনজীবী সমিতি তিন কার্যদিবস করে মোট ছয় দিন কর্মবিরতি পালন করে। দাবি পূরণ না হওয়ায় আজ দুপুরে আইনজীবী সমিতির ভবনের দ্বিতীয় তলায় আইনজীবীদের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা চলে বেলা তিনটা পর্যন্ত। সভা শেষে দাবি পূরণ না হওয়ায় আরও তিন কার্যদিবসের কর্মবিরতি বাড়ানো হয়।

এর আগে ৯ জানুয়ারি অসদাচরণের অভিযোগ তুলে আইনজীবী কামরুল ইসলামকে আইনজীবী সমিতি থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। ৮ জানুয়ারি কর্মবিরতির মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ (সরাইল) আদালতে একটি মামলার শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন ওই আইনজীবী।

আরও পড়ুন

আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দাবি পূরণ না হওয়ায় কর্মবিরতির সময় আরও তিন দিন বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি ছিল জেলা জজ শারমিন নিগার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুকের অপসারণ এবং নাজির মুমিনুল ইসলাম চৌধুরীর (বর্তমানে প্রেষণে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের সেরেস্তাদার) দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। কিন্তু আমরা কোনো ফলাফল পাইনি। গত মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে আমাদের আইনজীবীদের একটি দল দেখা করেছিলাম। সব ঘটনা লিখিতভাবে তাঁদের জানিয়েছি। আইনমন্ত্রী আজ রাতে আমাদের তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য বলেছেন। আমরা ঢাকার উদ্দেশে রওনা হচ্ছি। চলমান পরিস্থিতি ও সমস্যা নিরসনে আলোচনা হবে। যদি আমাদের দাবি পূরণ হয়, তাহলে কর্মবিরতির কর্মসূচি প্রত্যাহার করব।’

আরও পড়ুন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মমতাজ উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আবদুন নূর, ঢাকা বারের প্রতিনিধি সাঈদ আহমেদ, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানবীর ভূঞা, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান প্রমুখ। আইনজীবীরা পুরো ঘটনা আইনমন্ত্রীর কাছে মৌখিক ও লিখিতভাবে তুলে ধরেন। এর আগে আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল ও বার কাউন্সিল বরাবর লিখিত দেন। মৌখিক ও লিখিত অভিযোগে দুই বিচারকসহ তিনজনকে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।

গত ১ ডিসেম্বর শীতকালীন ছুটির আগে আদালতের শেষ কার্যদিবস ছিল। ওই দিন তিনটি মামলা না নেওয়ায় ১ জানুয়ারি থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জন করেন আইনজীবীরা। এরপর ২ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর এজলাস চলাকালে বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের সঙ্গে আইনজীবীদের বাদানুবাদের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ৪ জানুয়ারি জেলা বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন আদালতের সব এজলাসের দরজা ও প্রধান ফটকে তালা দিয়ে এক দিনের কর্মবিরতি পালন করে। ৫ জানুয়ারি আইনজীবীরা তিন কার্যদিবসের কর্মবিরতির ডাক দেন, যা আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আরও তিন দিন বাড়ানো হলো।