নরসিংদীর চরে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ হয়ে নারী ও কিশোরসহ ৫ জন নিহত

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে আহতদের চিকিৎসা চলছে। বৃহস্পতিবার সকালে
ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার ও বালুর ব্যবসার জেরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নারী, কিশোরসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার রাত ১১টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত দফায় দফায় উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের সায়েদাবাদ ও বালুরচর এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন শ্রীনগর ইউনিয়নের সায়েদাবাদ এলাকার আমির হোসেন (৬০), বাদল মিয়া (৪৫), জুনাইদ মিয়া (১৬), আনিস মিয়া (৩০) ও ফিরোজা বেগম (৪০)। তাঁদের মধ্যে আমির হোসেন, জুনাইদ মিয়া ও ফিরোজা বেগমের লাশ রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা আছে।

নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন আনিস মিয়া। এ ছাড়া নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়েছে বাদল মিয়ার। বাদল মিয়ার মৃত্যুর কথা জানিয়েছেন তাঁর ছোট বোন আনোয়ারা বেগম।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সায়েদাবাদ গ্রামে বালুর ব্যবসাসহ এলাকার নিয়ন্ত্রণ হানিফ মাস্টারের গ্রুপের হাতে। প্রতি রাতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগ আছে তাঁদের বিরুদ্ধে। পাশের বালুরচর গ্রামের লোকজনকে এ এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হতো না। বর্ষার কারণে চারপাশ পানিতে ভরে যাওয়ায় বালুরচর এলাকার লোকজনের চলাচলের পথও সীমিত হয়ে যায়।

গতকাল রাত ১১টার দিকে বালুরচর এলাকার লোকজন এরশাদ মিয়া ও সাবমিয়ার নেতৃত্বে সায়েদাবাদ বাজারে অবস্থান নেন। এ সময় তাঁদের হামলায় হানিফ মাস্টারের পাঁচ-ছয় কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। রাতেই তাঁদের রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে হানিফ মাস্টারের লোকজন ওই বাজারে অবস্থান নেওয়া বালুরচরের লোকজনের ওপর হামলা চালান। এ সময় টেঁটা ও গুলির আঘাতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৩০ জন আহত হন। পরে দিবাগত রাত ১টায়, ভোরে ও আজ বেলা ১১টার দিকে দফায় দফায় তাঁদের মধ্যে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে হতাহত হন। বেলা দেড়টা পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।

গুলি ও টেঁটায় বিদ্ধ হয়ে আহত ব্যক্তিদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নরসিংদী সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সেনাবাহিনীর নরসিংদী ক্যাম্পের একাধিক টিম ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে।
রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রঞ্জন বর্মণ জানান, ‘সায়েদাবাদ এলাকা থেকে আমাদের হাসপাতালে জুনাইদ, ফিরোজা ও আমির নামের তিনজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। এ ছাড়া আহত আরও অন্তত ১৯ জনকে আমরা চিকিৎসা দিয়েছি। একজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হতাহত ব্যক্তিরা গুলিবিদ্ধ ছিলেন।’

নরসিংদী সদর হাসপাতালের আরএমও মাহমুদুল কবির বাসার জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় আহত ১৫ জন তাঁর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আনিস নামের একজন মারা গেছেন। গুরুতর আহত পাঁচজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে শ্রীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজ মোর্শেদ খানের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি।
রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাফায়েত হোসেন জানান, আধিপত্য বিস্তার ও বালুর ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ঠিক কতজন নিহত হয়েছেন, এখনো তাঁরা নিশ্চিত নন।