আচরণবিধি ভেঙে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন নিক্সন চৌধুরী
আচরণবিধি লঙ্ঘন করে গাড়িবহরে তিন উপজেলায় মহড়া দিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন। আজ বুধবার বেলা সোয়া দুইটার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় রিটার্নিং কর্মকর্তার কক্ষে নিক্সন চৌধুরীর সমর্থক ফরিদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহদাৎ হোসেন, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমান, চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কাউসারসহ অন্তত ৩০ নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কক্ষ থেকে বের হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নিক্সন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘কাজী জাফর উল্যাহর লোকজন আমার সংসদীয় আসনের তিন উপজেলায় তাঁর নেতা-কর্মীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। কিন্তু এতে তাঁর নেতা-কর্মীরা ভীত নন। প্রধানমন্ত্রী অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাঁর এলাকায় ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আগামী ৭ জানুয়ারি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। নির্বাচনে ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসনের জনগণ দেখিয়ে দেবেন, কাজী জাফর উল্যাহর কোনো ভোট নেই।’
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকালে নিক্সন চৌধুরী ভাঙ্গার আজিমনগর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামের বাসা থেকে বের হয়ে প্রথমে শিবচরের দত্তপাড়ায় নিজের পৈতৃক বাড়িতে যান। সেখানে প্রয়াত বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরীর কবর জিয়ারত করেন। এরপর তিনি আড়াই শতাধিক মাইক্রোবাস ও দুই শতাধিক মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে ফরিদপুর শহরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। একটি ছাদখোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে শুভেচ্ছা জানাতে জানাতে এগিয়ে যান নিক্সন। তিনি ভাঙ্গার দত্তপাড়া থেকে যাত্রা শুরু করে সদরপুরের চন্দ্রপাড়া, আটরশি পার হয়ে চরভদ্রাসন হয়ে ফরিদপুর সদরের গজারিয়া, মুন্সিবাজার দিয়ে ঢাকা-বরিশাল সড়ক ধরে ফরিদপুর শহরের ভাঙ্গা রাস্তার মোড় হয়ে মুজিব সড়ক, ব্রাহ্মসমাজ সড়ক দিয়ে জেলা পরিষদের সামনে এসে পৌঁছান। এ সময় ওই এলাকায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, জেলা পরিষদে কিছুক্ষণ থাকার পর সমর্থকদের নিয়ে পায়ে হেঁটে ব্যান্ড পার্টির বাদ্যের সঙ্গে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে যান নিক্সন চৌধুরী। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিচতলার সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠতে ভিড়ের চাপে গলদঘর্ম অবস্থায় পড়েন তিনি। এ সময় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেনকে ভিড় সামলাতে ব্যতিব্যস্ত দেখা যায়।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালার ৮ (খ) ধারায় বলা হয়েছে, মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় কোনো প্রার্থী কোনো ধরনের মিছিল কিংবা শোডাউন করতে পারবেন না। (ক) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থী, ট্রাক, বাস, মোটরসাইকেল, নৌযান, ট্রেন কিংবা অন্য কোনো যান্ত্রিক যানবাহনসহকারে মিছিল বা শোডাউন করতে পারবেন না।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে নিক্সন চৌধুরীকে দুই দফা ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে নিক্সনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সদরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্নজন বিভিন্ন জায়গা থেকে আলাদাভাবে রওনা দিয়েছি। কিন্তু শেষের দিকে সবাই মিলে যাওয়ায় গাড়িবহর বড় হয়ে গেছে।’
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহমান তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় আমার কক্ষে আমি নিক্সন চৌধুরীসহ পাঁচজনের বেশি ঢুকতে দিইনি। অন্য যাঁরা ছিলেন, তাঁরা সবাই সাংবাদিক ছিলেন।’ গাড়িবহরের বিষয়ে তিনি বলেন, সারা দেশে এই একই অবস্থা চলছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, ‘প্রতীক বরাদ্দের আগে আচরণবিধি প্রযোজ্য নয়। এ কথা ধরলে তিনি (নিক্সন) দোষ করেননি। আবার নির্বাচন কমিশনের জারি করা আচরণবিধির সীমা অনুযায়ী আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে।’