চাঁপাইনবাবগঞ্জ–২ ও ৩ আসনের উপনির্বাচনে ঘরের শত্রু সামলাতে ব্যস্ত আ.লীগ
বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগে শূন্য ঘোষিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে এখন ঘরের শত্রু সামলাতে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ। দল–মনোনীত প্রার্থীর সমর্থকেরা বলছেন, জেলায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বড় একটি অংশ দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ইতিমধ্যে ঘর সামলাতে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বৈঠকও করেছেন দলটির নেতারা।
বিষয়টি প্রথম আলোর কাছে নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত দুই প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মু. জিয়াউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওদুদ। জিয়াউর চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে এবং ওদুদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। তাঁরা দুজনই সাবেক সংসদ সদস্য।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সামিউল হক। কাগজে–কলমে ‘বিদ্রোহী’ না হলেও তিনি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। তাঁর পক্ষে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বড় একটি অংশ কাজ করছে। বিষয়টি নিয়ে বিব্রত দল–মনোনীত প্রার্থীরা। নির্বাচনী তৎপরতার অংশ হিসেবে গতকাল শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরের একটি রেস্তোরাঁয় পৌর আওয়ামী লীগ ও ওয়ার্ড কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায়ও বিষয়টি আলোচিত হয় বলে সভায় উপস্থিত সূত্র নিশ্চিত করেছে।
নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, সদর আসনে দলীয় প্রার্থী আবদুল ওদুদের বিপক্ষে কাজ করছে দলের বড় একটি অংশ। তাদের একজন পৌর মেয়র মোখলেসুর রহমান। তলেতলে সামিউল হকের সমর্থনে কাজ করছে তারা। এ ছাড়া জেলা, সদর উপজেলা, পৌরসভা ও নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্রলীগকে আবদুল ওদুদের পক্ষে নির্বাচনী তৎপরতা দেখা যায়নি। এমনকি ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ওদুদকে আমন্ত্রণও জানানো হয়নি। অন্যদিকে নেতা-কর্মীদের মধ্যে যাঁরা ওদুদের পক্ষে কাজ করছেন, তাঁদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। এমনকি হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে।
জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য কামাল উদ্দীন বলেন, জেলা, উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের মূল নেতাদের এখন পর্যন্ত আবদুল ওদুদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রক্ষা করতে বা নির্বাচনী কাজে ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মোখলেসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বিদ্রোহী মোকাবিলা করে বিজয়ী হয়েছি। আমি কখনোই বিদ্রোহীর পক্ষে নই। যাঁরা আগে বিদ্রোহীকে সমর্থন দিয়েছিলেন, তাঁরাই এখন নৌকার ছায়াতলে গিয়ে নৌকার প্রার্থীকে বিভ্রান্ত করছেন। তাঁরা আওয়ামী লীগে অতিথি পাখির মতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রার্থী আবদুল ওদুদ এখন পর্যন্ত আমাকে ডাকেননি। এরপর আমি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমীন গতকাল বেলা তিনটায় দলীয় কার্যালয়ে সভা করে নেতা–কর্মীদের নৌকার পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছি। নৌকার বিজয়ে আমরা সর্বাত্মক কাজ করে যাব।’
এ বিষয়ে জিয়াউর রহমান ও আবদুল ওদুদ প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের ঘরের শত্রু ও ছাত্রলীগের নিষ্ক্রিয়তার বিষয়টি কেন্দ্রকে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে। তবে ছাত্রলীগের সাধারণ কর্মীরা নৌকার পক্ষে কাজ করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফ জামান ওরফে আনন্দ প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা সঠিক নয়। নৌকা প্রতীকের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করতে সময়মতো কাজ করে তাঁরা সেটা প্রমাণ করবেন। ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে হাজারো নেতা-কর্মীর উদ্দেশে তিনি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবদুল ওদুদকে বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়েছেন বলে জানান।