কাজে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে ধর্মঘটে শ্রীমঙ্গলের চা-শ্রমিকেরা
প্রশাসন ও চা-শ্রমিক ইউনিয়নের গতকাল রোববার রাতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আবার ধর্মঘটে অংশ নিয়েছেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাধারণ চা-শ্রমিকেরা।
আজ সোমবার সকাল থেকে শ্রমিকনেতাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজে ফিরেছিলেন উপজেলার ভাড়াউড়া, ভুরভুরিয়াসহ কয়েকটি চা–বাগানের শ্রমিকেরা। কিন্তু অন্যান্য বাগানের শ্রমিকেরা কাজে যোগ না দেওয়ায় তাঁরাও কাজ বন্ধ করে ধর্মঘটে অংশ নেন।
এদিকে বেলা ১১টায় বিক্ষুব্ধ চা-শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে শ্রীমঙ্গলের কালীঘাট চা–বাগানে যান বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি পংকজ কন্দ। শ্রমিকদের গত রাতের সভার কথা বোঝাতে ও ধর্মঘট প্রত্যাহার করার কথা বলতে গিয়ে সাধারণ শ্রমিকদের হাতে লাঞ্ছিত হন তিনি। দুপুর ১২টার দিকে কালীঘাট চা–বাগান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি ফুলছড়া চা–বাগান হয়ে ভাড়াউড়া চা–বাগানে এসে জনসমুদ্রে রূপ নেয়।
এর আগে গতকাল রাত ৯টায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চা–শ্রমিকনেতাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থা রেখে আগের ১২০ টাকা মজুরিতে কাজে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। দুই পক্ষ যৌথ বিবৃতিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সভাপতিত্বে বৈঠকে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, বিভাগীয় শ্রম দপ্তর শ্রীমঙ্গলের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম, চা–শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি পংকজ কন্দ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা, অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দীসহ বিভিন্ন ভ্যালির সভাপতিরা উপস্থিত ছিলেন।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকের প্যাডে দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে সভার সিদ্ধান্তগুলো জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রেখে তাঁর সম্মানে চা-শ্রমিক ইউনিয়ন তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে আজ কাজে যোগ দেবে। আপাতত চলমান মজুরি ১২০ টাকা হারেই শ্রমিকেরা কাজ করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে পরবর্তী সময়ে মজুরির বিষয়টি নির্ধারিত হবে। আসন্ন দুর্গাপূজার আগেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হওয়ার জন্য চা-শ্রমিকনেতারা আবেদন করেছেন, যা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জানানো হবে। চা-শ্রমিকের অন্যান্য দাবি লিখিত আকারে জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া হবে। সেগুলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। আর বাগানমালিকেরা চা-বাগানের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী ধর্মঘটকালীন মজুরি শ্রমিকদের পরিশোধ করবেন।
মজুরি বাড়ানোর দাবিতে টানা ৯ দিন ধরে ধর্মঘট পালন করেন শ্রমিকেরা। সরকারি আমলা, সংসদ সদস্যসহ বেশ কয়েক দফায় উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হলেও বারবার ব্যর্থ হয়ে কোনো সমঝোতায় পৌঁছায়নি। ধর্মঘটের নবম দিন গতকাল সকাল থেকে সিলেট, বড়লেখা, কুলাউড়া, শ্রীমঙ্গলে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন শ্রমিকেরা। হবিগঞ্জে দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন তাঁরা।