মামলা করা নিয়ে ভাই-ভাবির দ্বন্দ্ব, চতুর্থ দফার মামলায় আসামি পলকসহ ৯৬
নাটোরের সিংড়া বাসস্ট্যান্ডে বিএনপি নেতা জাকির হোসেনকে হত্যার অভিযোগে চতুর্থবারের মতো মামলা করেছেন তাঁর ভাই আনোয়ার হোসেন ওরফে বুলু মিয়া। মামলায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলকসহ আওয়ামী লীগের ৯৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সিংড়া আমলি আদালতে মামলার আবেদন করেন আনোয়ার হোসেন। আদালতের বিচারক জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুমন আলী আবেদনটি আমলে নিয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ৪ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন।
এর আগে একই ঘটনায় থানা ও আদালতে আরও তিনবার মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতায় থাকার সময় থানা–পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সব আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সরকারের পতনের পর আদালতে করা একটি মামলার ব্যাপারে তদন্ত করছে সিআইডি।
নিহত জাকির হোসেন বগুড়ার শেরপুর উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ২০১০ সালের ৫ মে রাজশাহীতে বিএনপির মহাসমাবেশে যোগ দিতে যাওয়ার পথে নাটোরের সিংড়া বাসস্ট্যান্ডে হামলার শিকার হয়ে মারা যান। নিহত ব্যক্তির ভাই আনোয়ার হোসেন ও স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা বাদী হয়ে একাধিক মামলা করেন। ভাই-ভাবির মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকায় এমন ঘটনা ঘটে।
আজ করা মামলায় নাটোর-৩ (সিংড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলককে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর শ্যালক লুৎফুল হাবীব, সিংড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ মোল্লা, যুগ্ম সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক ও পলকের ব্যক্তিগত সহকারী রুহুল আমিন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ডালিম আহমেদ, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সোহেল তালুকদার, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সফিকুল ইসলামসহ ৯৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ২০০ থেকে ২৫০ জনকে।
মামলার আরজিতে বলা হয়, ২০১০ সালের ৫ মে অন্য নেতা-কর্মীদের নিয়ে মিনিবাসে করে বগুড়া থেকে রাজশাহীতে বিএনপির মহাসমাবেশে যাচ্ছিলেন জাকির। বেলা সাড়ে ১১টার দিক জুনাইদ আহ্মেদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের কয়েক শ দুর্বৃত্ত তাঁদের গাড়িবহরে হামলা করে। একপর্যায়ে আসামিরা ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা দিয়ে তাঁর ভাই জাকিরকে বেধড়ক পিটিয়ে মহাসড়কে ফেলে রাখে। এ সময় বিএনপির গাড়িবহরের বাস, মিনিবাস ও মাইক্রো ভাঙচুর করে ৭৫ লাখ টাকার ক্ষতিসাধনের পাশাপাশি বিএনপি নেতা-কর্মীদের ৬০টি মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। বিএনপি নেতারা পালানোর চেষ্টা করলে দুর্বৃত্তরা ফাঁকা গুলি করে ত্রাসের সৃষ্টি করে। আহত জাকিরকে নেতা-কর্মীরা প্রথমে সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু পথেই তিনি মারা যান।
ওই ঘটনার পাঁচ দিন পর ২০১০ সালের ১০ মে নিহত ব্যক্তির ভাই আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে সিংড়া থানায় জুনাইদ আহ্মেদসহ ৮৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। ২০১০ সালের ওই মামলা নম্বর ১৬। পরের বছর (২০১১ সালে) নিহত ব্যক্তির স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা বাদী হয়ে একই আসামিদের বিরুদ্ধে সিংড়া আমলি আদালতে দ্বিতীয় মামলাটি করেন। ওই বছরেই দুটি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে সব আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করে সিংড়া থানা–পুলিশ। আদালত ওই প্রতিবেদন গ্রহণ করে মামলা দুটি নিষ্পত্তি করেন।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গতকাল নিহত ব্যক্তির স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা আবার পলকসহ ১২২ জনকে আসামি করে আমলি আদালতে একটি মামলার আবেদন করেন। যার নম্বর-১০০৩/২৪। আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে সিআইডিকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। আগামী ১২ জানুয়ারি ওই প্রতিবেদনের দিন ধার্য আছে।
একই ঘটনায় আজ নিহত ব্যক্তির ভাই আনোয়ার ৯৬ জনকে আসামি করে সিংড়া আমলি আদালতে আরেকটি নালিশি মামলা করেন। আদালত আবেদনটি গ্রহণ করে পরবর্তী আদেশের জন্য ৪ ডিসেম্বর দিন ধার্য রেখেছেন।
একই ঘটনায় দুজন বাদীর বারবার মামলা করা নিয়ে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। নাম প্রকাশ না করে সিংড়া উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, জাকিরের এলাকায় বিএনপির মধ্যে দুটি পক্ষ আছে। নিহত ব্যক্তির স্ত্রী ও ভাই একে অপরের বিপরীত পক্ষের। মামলার আসামি করা নিয়ে তাঁরা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারছেন না। এ জন্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ন্যায়বিচার বিঘ্নিত হচ্ছে।
সিংড়ার এক আইনজীবী নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মূলত আসামি করা নিয়ে উভয় বাদীর মধ্যে টানাপোড়েন আছে। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত।’