ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র প্রভাবে পটুয়াখালীতে বৃষ্টির সঙ্গে বইছে দমকা হাওয়া
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’তে রূপ নেওয়ায় উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীতে আজ শুক্রবার সকাল থেকেই মাঝারি বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া বইছে। নিম্নচাপের প্রভাবে গতকাল সকাল থেকে আকাশ মেঘলা ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। রাত থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। গভীর সাগর থেকে মাছ ধরার ট্রলারগুলো নিরাপদে আশ্রয় নিচ্ছে। জেলার অভ্যন্তরীণ নদীপথে সব ধরনের নৌযান চলাচল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় জরুরি সভা করেছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এ সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. নূর কুতুবুল আলম। সভায় ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার অংশ হিসেবে জেলার উপকূলীয় এলাকাসহ বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের মানুষদের সতর্কসহ নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় শুকনা খাবার প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সভায় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পটুয়াখালীর উপপরিচালক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, জেলায় ১ লাখ ৯১ হাজার ১১৯ হেক্টর জমিতে আমন ফসল রয়েছে। এর মধ্যে ৫ শতাংশ ফসল কাটা হয়েছে। ২০ শতাংশ আধা পাকা। এ অবস্থায় ঝড়-জলোচ্ছ্বাস হলে আমনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুর রহমান জানান, জেলায় মোট ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ১০ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ। তবে তাদের হাতে ১৬ হাজার জিও ব্যগ (বালুভর্তি ব্যাগ) রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ মেরামত ও রক্ষার জন্য মাঠপর্যায়ে লোকবল প্রস্তুত রয়েছে।
সভায় জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে জেলায় ৭০৩টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ৩৫টি মুজিব কিল্লা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষ নিরাপদ আশ্রয় নিতে পারবে। প্রয়োজনে আশ্রয়কেন্দ্র আরও বাড়ানো যাবে। জেলায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৪৩৮টি ইউনিটে ৮ হাজার ৭৬০ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. নূর কুতুবুল আলম বলেন, দুর্যোগ–পরবর্তী জরুরি সহায়তার প্রায় ২৮ লাখ টাকা ও ৫৫০ মেট্টিক টন চাল বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সিপিপির স্বেচ্ছাসেবকেরা উপকূলের বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দাদের নিরাপদে থাকার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবকদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।