মাগুরায় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা হত্যার ৫ দিন পর আদালতে মামলার আবেদন
মাগুরার মহম্মদপুরে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মো. রিয়াজ মোল্যাকে (৩৬) পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পাঁচ দিন পর আদালতে মামলার আবেদন করা হয়েছে। আজ রোববার মাগুরার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১ আদালতে নিহত মো. রিয়াজ মোল্যার বাবা নিজাম উদ্দীন বাদী হয়ে মামলার আবেদন করেন। আদালতের বিচারক এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়েছে কি না, মহম্মদপুর থানা-পুলিশের কাছে জানতে চেয়েছেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আবদুর রশীদ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগে আদালতে মামলার আবেদন করা হয়েছে। আদালত মহম্মদপুর থানা-পুলিশের কাছে জানতে চেয়েছেন, এ অভিযোগে থানায় কোনো মামলা হয়েছে কি না। আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে আদালতকে এ তথ্য জানাতে বলা হয়েছে।
নিহত রিয়াজ মোল্যা (৩৬) মহম্মদপুর উপজেলার নহাটা ইউনিয়নের ফুলবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা এবং নহাটা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য ছিলেন। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে নহাটা ইউনিয়নের ফুলবাড়ি গ্রামে তাঁকে পিটুনি দেওয়া হয়। পরদিন ভোরে মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
নিহত মো. রিয়াজ মোল্যার পরিবার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশের দাবি, গ্রাম্য দলাদলি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নহাটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের লোকজন তাঁকে হত্যা করেছেন। তবে ইউপি চেয়ারম্যান মো. তৈয়েবুর রহমানের দাবি, ঘের থেকে মাছ চুরি করতে গিয়ে এলাকাবাসীর পিটুনিতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একাধিকবার মামলা করতে গেলেও পুলিশ গ্রহণ করেনি বলে স্বজনদের অভিযোগ। পুলিশ অবশ্য সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
আজ বিকেলে আদালত চত্বরে নিহত মো. রিয়াজ মোল্যার বাবা নিজাম উদ্দিন ও তাঁর পক্ষের গ্রাম্য দলের নেতাদের সঙ্গে কথা হয়। নিজাম উদ্দিন মোল্যা অভিযোগ করেন, থানায় মামলা না নেওয়ায় বাধ্য হয়ে পাঁচ দিন পর আদালতে মামলা করেছেন।
গ্রাম্য দলের মাতবর কামরুজ্জামান ও নহাটা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খালিদ হোসেন বলেন, মামলা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় প্রথম দফায় মহম্মদপুর থানায় যান। তখন অনেক রাত হয়ে গেছে বলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাঁদের পরের দিন সকালে আসতে বলেন। পরদিন বেলা একটার সময় তাঁরা দ্বিতীয় দফায় থানায় যান। তখন ওসি মামলার নথি পর্যবেক্ষণ করে আসামির সংখ্যাসহ নানা প্রশ্ন করে ফিরিয়ে দেন।
জানতে চাইলে মহম্মদপুর থানার ওসি মো. বোরহান উল ইসলাম সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। বাদী না এলে কী করব? ওরা মনে হয় আজ আদালতে মামলা করছে।’
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, গ্রাম্য দলাদলিতে রিয়াজ মোল্যা স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষের সঙ্গে ছিলেন। গত দুটি ইউপি নির্বাচনে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আলী মিয়ার পক্ষে ছিলেন তিনি। সেখানে গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে তৈয়েবুর রহমান চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরিবার ও আওয়ামী লীগের এক পক্ষের অভিযোগ, রিয়াজ মোল্যা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিজের দলে ভেড়াতে দীর্ঘদিন ধরে চাপ দিচ্ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান তৈয়েবুর রহমান।
অভিযোগের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান তৈয়েবুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার রাতে আমীন উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির ঘের থেকে রিয়াজ মাছ চুরি করছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে নৈশপ্রহরী জসিম উদ্দিন চিৎকার শুরু করলে চারপাশ থেকে লোকজন এসে তাঁকে পিটুনি দেন। রাত ১১টার দিকে নহাটা পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে ফোন করলে একজন পুলিশ সদস্য আসেন। পরে নৈশপ্রহরী জসিম উদ্দিন ও ওই পুলিশ সদস্য রিয়াজকে হাসপাতালে নিয়ে যান।