শীতের কুয়াশা মাড়িয়ে ২১ কিলোমিটার হাফ ম্যারাথন

কক্সবাজারে বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত হাফ ম্যারাথনে দৌড়ান ৩৯৮ নারী-পুরুষ। আজ সকালে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভেছবি-প্রথম আলো

এক পাশে সাগর, অন্য পাশে পাহাড়ের সারি। এর মধ্যেই ৮৪ কিলোমিটার দীর্ঘ কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক। শীতের কুয়াশা মাড়িয়ে ভোর সাড়ে পাঁচটায় সড়কটির দরিয়ানগরের ভাঙারমুখে জড়ো হন প্রায় ৪০০ দৌড়বিদ। সেখান থেকে শুরু হয় ‘হাফ ম্যারাথন’। শেষ হয় ২১ কিলোমিটার দূরের ইনানী সৈকতে।

গতকাল শনিবার সকালে দৃষ্টিনন্দন মেরিন ড্রাইভে ২১ কিলোমিটার এই দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। বিজয় দিবস উপলক্ষে এই হাফ ম্যারাথনে অংশ নেন দেশ-বিদেশের ৩৯৮ দৌড়বিদ। ম্যারাথনের প্রতিপাদ্য ছিল—রান ফর হিরোজ অব আওয়ার ভিক্টরি।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিযোগিতার জন্য ২১ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো হয় সেবা বুথ ও হাইড্রেশন কর্নার; ছিল পর্যাপ্ত সড়ক নিরাপত্তাব্যবস্থা, মেডিকেল ক্যাম্প ও অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। হাফ ম্যারাথনে কাট অফ টাইম (ফিনিশিং টাইম) ধরা হয় চার ঘণ্টা। ৩৯৮ জনের মধ্যে ২৪৮ জন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ম্যারাথন শেষ করেন।

প্রতিযোগিতায় পুরুষ বিভাগে ইমরান হাসান ও নারী বিভাগে মেজর শাওলিন সিগমা চ্যাম্পিয়ন হন। পুরুষ ক্যাটাগরিতে সেরা ১০ জনের মধ্যে ছিলেন দুজন বিদেশি। তাঁরা হলেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক জেমেনি আর জানেলি। প্রতিযোগিতা শেষে প্রতিযোগীদের পুরস্কার, সম্মাননা স্মারক ও সনদ বিতরণ করা হয়।

হাফ ম্যারাথনে অতিথিদের সঙ্গে বিজয়ীরা। আজ দুপুরে তোলা
প্রথম আলো

অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ মিনহাজুল আলম উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘শুধু এই একটি ম্যারাথন সম্পন্ন করেই শেষ করছি তা নয়, আগামী দিনেও ম্যারাথন আয়োজনের চিন্তা রয়েছে। এমন মনোরম আবহাওয়ায় সামনে সাইকেল রেস আয়োজনের চিন্তাভাবনাও রয়েছে।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্‌উদ্দিন বলেন, ‘বিজয় দিবস উপলক্ষে হাফ ম্যারাথনের উদ্দেশ্য অনেক। মহান বিজয় দিবসে আমাদের যে চেতনা, সেটি সমুন্নত রাখা। একই সঙ্গে আমাদের আগামী দিনের যে নতুন বাংলাদেশ, সেটিকে গড়ে তোলার যে প্রয়াস, তা সমুন্নত রাখা ও চেতনাকে ধারণ করা। কক্সবাজারের পর্যটন সম্ভাবনাকে বিকশিত করাও এর অন্যতম উদ্দেশ্য।’

প্রতিযোগিতায় পুরুষ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন ইমরান হাসান বলেন, ‘বিজয় দিবস হাফ ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করে আমি চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। তাতে খুশির শেষ নেই। এ ধরনের আয়োজন দেশের প্রতিটি বিভাগ, জেলা ও উপজেলায় করা উচিত। এতে তরুণদের মাদক ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থেকে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ বাড়বে।’

নারী বিভাগে চ্যাম্পিয়ন মেজর শাওলিন সিগমা বলেন, ম্যারাথনের জন্য মেরিন ড্রাইভ বাংলাদেশে সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা। যেখানে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যে দৌড়ানো যায়।

ম্যারাথনে অংশ নেওয়া আমেরিকান দম্পতি স্যাম ও জানেলি বলেন, ‘সুন্দর দেশ, সুন্দর রাস্তা; সাগর আর পাহাড়ের মাঝখানে দৃষ্টিনন্দন মেরিন ড্রাইভে দৌড়াতে বেশ ভালো লেগেছে। বাংলাদেশের মানুষ খুবই বন্ধুসুলভ।’