বিএনপির সমাবেশস্থলে ও বাইরে উন্নত রেজল্যুশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে: পুলিশ
আগামী ৩ ডিসেম্বর বেলা দুইটা থেকে বিকেল পাঁচটার মধ্যে বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করাসহ আট শর্তে এর অনুমতি দিয়েছে রাজশাহী মহানগর পুলিশ। আজ বুধবার মহানগর পুলিশের বিশেষ শাখার পুলিশ সুপারের সই করা এক চিঠিতে এ অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, এটা জঙ্গিপ্রবণ এলাকা। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে ও শান্তি–শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে এসব শর্ত দেওয়া হয়েছে।
শর্তগুলো হলো—১. মাদ্রাসার মাঠের (হাজী মুহম্মদ মহসীন সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠ) মধ্যে সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। সমাবেশস্থলের আশপাশসহ রাস্তায় কোনো অবস্থাতেই সমবেত হওয়া এবং যানবাহন ও মানুষের চলাচলে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। নিরাপত্তার জন্য সমাবেশে আগত নেতা-কর্মীদের দেহ তল্লাশির ব্যবস্থা করতে হবে। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্তসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে।
২. দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সামাজিক-ধর্মীয় মূল্যবোধ, রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তি ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়—এমন কোনো কার্যকলাপ ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া ও প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না।
৩. সমাবেশে আসা-যাওয়ার পথে শোভাযাত্রা, মিছিল করাসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে—এমন কর্মকাণ্ড করা যাবে না। ব্যানার, ফেস্টুন ও পতাকায় কোনো লাঠি ও রড ব্যবহার করা যাবে না। ব্যানার, ফেস্টুন ইত্যাদির ব্যবহার সীমিত করতে হবে।
৪. আজান, নামাজ ও অন্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময়ে মাইক বা শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত আসতে পারে—এমন কোনো বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন ও বক্তব্য দেওয়া বা প্রচার করা যাবে না।
৫. মঞ্চ তৈরির সঙ্গে যাঁরা জড়িত (আইডি কার্ডসহ), তাঁরা ছাড়া অন্য কেউ ৩ ডিসেম্বরের আগে সমাবেশস্থলে প্রবেশ বা অবস্থান করতে পারবেন না। সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম ওই দিন বেলা ২টা থেকে শুরু করে বিকেল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। সমাগত নেতা-কর্মীরা যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারেন, দায়িত্বশীল নেতা বা আয়োজকদের সেই দায়িত্ব নিতে হবে।
৬. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলের অভ্যন্তরে ও বাইরে উন্নত রেজল্যুশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। সমাবেশস্থলের বাইরে বা সড়কের পাশে প্রজেক্টর, মাইক বা সাউন্ডবক্স ব্যবহার করা যাবে না। সমাবেশস্থলে ইন্টারনেট সংযোগ, ব্রডব্যান্ড সংযোগ ও রাউটার ব্যবহার করা যাবে না।
৭. সমাবেশে আসার ক্ষেত্রে যানবাহন শহরের ভেতরে প্রবেশ করানো যাবে না। রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশের কর্মসূচি পালন থেকে বিরত থাকতে হবে। নির্ধারিত স্থানে গাড়ি পার্কিং করতে হবে এবং মূল সড়কে কোনো পার্কিং করা যাবে না।
৮. এটি স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়। স্থান ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে অনুমতি বাতিল করার ক্ষমতা রাখে।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় জনসভার সমন্বয়ক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁদের শর্ত দেওয়ার ছিল তাঁরা দিয়েছেন, আমাদের কাজ আমরা করব। দেশে তো সামরিক আইন চলছে না। নাকি চলছে? দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন রাখলাম।’
তবে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘শর্ত মানব কি না, তা সময়ই বলে দেবে। বর্ষায় পদ্মার অবস্থা এক রকম থাকে। শীতে আরেক রকম হয়।’