কটিয়াদীতে পেট্রল ঢেলে গায়ে আগুন ধরিয়ে নিজেকে পুড়িয়ে মারলেন যুবক
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে একটি জ্বালানি বিক্রির দোকান থেকে মোটরসাইকেলে পেট্রল নিচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। তখন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক যুবক আচমকা এসে পেট্রলের কৌটা কেড়ে নিয়ে নিজের গায়ে ঢেলে দেন। মুহূর্তেই পকেট থেকে দিয়াশলাই বের করে গায়ে ধরিয়ে দেন আগুন। দগ্ধ শরীর নিয়ে ছোটাছুটির সময় আগুন ছড়িয়ে পড়ে জ্বালানি বিক্রির ঘরে। জ্বালানি বিক্রির ঘর থেকে ছড়ায় দুই পাশে।
দগ্ধ যুবক চিকিৎসাধীন থাকার ২৪ ঘণ্টা পর আজ শনিবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান। তাঁর নাম সজীব মিয়া (২৪)। তিনি কটিয়াদী উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের চর নোয়াকান্দি গ্রামের মৃত আবু সিদ্দিকের ছেলে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, কটিয়াদী বাজারের সবচেয়ে প্রাচীন জ্বালানি বিক্রির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হলো রাধানাথ রায় ট্রেডার্স। এই দোকানে কেরোসিন, পেট্রল ও অকটেনের পাশাপাশি কীটনাশকও বিক্রি করা হয়। মোটরসাইকেলের চালকেরা এই দোকান থেকে নিজেদের গাড়িতে তেল নিতে আসেন। গতকাল শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে একজন গাড়ি নিয়ে এসে পেট্রল চান। তখন দোকানের একজন এসে মোটরসাইকেলে তেল ঢেলে দিচ্ছিলেন। এই সময় সজীব এসে তেলের বোতল কেড়ে নিয়ে গায়ে ঢেলে দেন। উপস্থিত লোকজন কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই সজীব পকেট থেকে দিয়াশলাই বের করে নিজের গায়ে আগুন দেন। মুহূর্তে তাঁর সারা শরীরে আগুন ধরে যায়।
পরে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট এসে দেড় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার আগে জ্বালানি বিক্রির ঘরটির সবকিছু পুড়ে যায়। পাশের দুটি দোকানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সজীবকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। ইউনিটের চিকিৎসকেরা স্বজনদের জানিয়েছেন সজিবের শরীরের ৭০ ভাগ পুড়ে গিয়েছিল। সজীবের বাবা ইউপি সদস্য ছিলেন। তিন বছর আগে দৃর্বৃত্তরা তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে। সজীব কর্মহীন ছিলেন। সারা দিন ঘোরাঘুরি করতেন। মানুষের সঙ্গে মিশতেন না, কথা বলতেন কম।
রধানাথ রায় ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী প্রিয় লাল রায়ের ছেলে পার্থ রায় বলেন, কোনো কিছু ধারণা করার আগেই দুর্ঘটনা ঘটে গেল। ছেলেটি সবকিছু খুব দ্রুত ঘটিয়েছে। আগুনে সব ধরনের জ্বালানি ও কীটনাশক পুড়ে গেছে। ঘর পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ৩০ লাখ টাকা হতে পারে বলে তাঁর ধারণা।
সজীবের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে কটিয়াদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. দাউদ বলেন, ‘যতটুকু জেনেছি নিহত সজীব মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। পরিবারের সদস্যরাও আমাদের একই কথা জানিয়েছেন।’