পাহাড়ি ঢলের পানি তীব্র বেগে আসছে, আখাউড়া-কসবা সড়কে যান চলাচল বন্ধ

তীব্র পানির বেগে সেতুর মাটি ধসে পড়েছে। শুক্রবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর এলাকার দেবগ্রাম সেতু এলাকায় তোলাছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও শঙ্কা কাটেনি। নতুন করে উপজেলার নয়দিল ও দেবগ্রাম সেতুর দক্ষিণ পাশের মাটি ধসে পড়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে। এলাকাবাসী জানান, আখাউড়ার সীমান্তবর্তী এলাকা জয়নগর দিয়ে ভারতের পাহাড়ি ঢলের পানি তীব্র বেগে আসছে। মূলত উপজেলার হাওড়া নদীর ও আগরতলা সংযুক্ত আখাউড়া ইমিগ্রেশনের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া জাজিরা, কাটা ও কালন্দি খাল দিয়ে ভারত থেকে পানি ঢুকছে।

আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজালা পারভীন রুহি প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলায় পানি কমতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২ দিকে নয়াদিল সেতুর একপাশের মাটি ধসে পড়েছে। ওই সেতুর ওপর দিয়ে বর্তমানে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলার মোগড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এম এ মতিন বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে উপজেলার নয়াদিল ও দেবগ্রাম সড়কের সেতুর দক্ষিণ পাশের মাটি ধসে পড়েছে। পাশাপাশি নয়াদিল এলাকায় বিদ্যুতের একটি খুঁটি ও একটি পাকাঘর ভেঙে গেছে। নয়াদিলের সেতুটি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আখাউড়া কসবা সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পানি তীব্র বেগে এখনো ঢুকছে। যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় আখাউড়া ইমিগ্রেশন দিয়ে যাত্রী পারাপার বন্ধ রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আখাউড়ার গঙ্গাসাগর পয়েন্টে হাওড়া নদীর বিপৎসীমা ৬ দশমিক শূন্য ৫ মিটার। গতকাল রাতে এখানে পানি ৫ দশমিক ৭৯ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হয়। আজ শুক্রবার সকাল নয়টায় পানি ৯ সেন্টিমিটার কমে ৫ দশমিক ৭০ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে; যা বিপৎসীমা থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। তবে তিতাসসহ মেঘনা নদীতে পানি বাড়ছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ইমিগ্রেশনে যাওয়ার একমাত্র পথ আখাউড়া-আগরতলা সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার আব্দুল্লাহপুর এলাকায় তোলঅ
ছবি: প্রথম আলো

স্থানীয় লোকজন বলেন, আগরতলার বৃষ্টির সঙ্গে আখাউড়ার বন্যার পরিস্থিতি নির্ভর করে। গতকাল থেকে আজ সকাল নয়টা পর্যন্ত আগরতলা ও আখাউড়ায় কোনো বৃষ্টি হয়নি। তবে আখাউড়া ও আগরতলার আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আছে। বৃষ্টি হলে পানি বাড়বে ও বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হবে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ভারী বৃষ্টি ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হাওড়া নদীর বাঁধের দুটি অংশসহ সড়কের ৮টি স্থান ভেঙে গেছে। এতে উজানের পানিতে আখাউড়া ও কসবা উপজেলার ৭ ইউনিয়নের ৩৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী আছে পাঁচ হাজার মানুষ। লোকজন প্লাবিত বসতঘর ছেড়ে উজান, স্বজনদের বাড়িঘরসহ উপজেলার ১১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে আনুমানিক ৩০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। আখাউড়ার ১৫টি সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কান্দিরপাড়ার বাসিন্দা কলেজশিক্ষক অভিজিৎ রায় তাঁর বাবা বাদল রায়কে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতের নারায়ণা হাসপাতালে গিয়েছিলেন। চিকিৎসা শেষে উড়োজাহাজে বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় তিনি আগরতলায় পৌঁছে আটকা পড়েছেন। অভিজিৎ রায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগরতলায় বন্যার কারণে আটকা পড়ে এক স্বজনের বাসায় আছি। বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার সকাল নয়টা পর্যন্ত কোনো বৃষ্টি হয়নি। তবে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। যেকোনো মুহূর্তে বৃষ্টি হতে পারে।’