সদ্য মাহারা তিন সন্তান নিয়ে অসুস্থ রফিকুলের কষ্টের জীবন
রফিকুল ইসলাম (৪০) ও শাহানা বেগম (৩৫) দম্পতির তিন সন্তান নিয়ে সংসার ভালোই চলছিল। রফিকুল দিনমজুরের কাজ করতেন। সরকার থেকে পেয়েছিলেন পাকা ঘর। ছয় মাস আগে হঠাৎ রফিকুল অসুস্থ হয়ে পড়েন। কোমরে ব্যথা নিয়ে কাজ করতে পারেন না। অসুস্থ হওয়ার পর স্ত্রী শাহানা বেগম সংসারের হাল ধরেন। এরই মধ্যে ১ ফেব্রুয়ারি শাহানা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যান। এর পর থেকে রফিকুল সদ্য মাহারা তিন সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার গাবগাছিয়া গ্রামে রফিকুল ইসলামের বাড়ি। মায়ের সূত্রে পাওয়া ছয় শতাংশ জমি ছাড়া তাঁর কোনো সম্পদ নেই। রফিকুল ইসলাম বলেন, তাঁর দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। মায়ের সূত্রে পাওয়া জমিতে তিনি বসবাস করেন। তবে ছয় শতাংশ জমি পেলেও দখলে আছে তিন শতাংশ। সেই জমিতে সরকার থেকে পাওয়া ঘরে স্ত্রী শাহানা বেগম, তিন সন্তান বিলকিস আক্তার (৭), সুমাইয়া আক্তার (৪) ও এক বছর বয়সী মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। হঠাৎ স্ত্রী মারা যাওয়ায় সন্তানদের নিয়ে তিনি চরম কষ্টে দিন পার করছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় কাজও করতে পারছেন না।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ছয় মাস আগে দিনমজুর রফিকুল ইসলামের কোমরে ব্যথা শুরু হয়। ব্যথার কারণে ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারছিলেন না। চিকিৎসা নিলেও শারীরিক অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি। কোমরে ব্যথার কারণে তিনি কর্মহীন হয়ে পড়েন। পরে সংসারের হাল ধরেন স্ত্রী শাহানা বেগম। গত ৩১ জানুয়ারি রাতে শাহানা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়েন। মাথা ব্যথায় ছটফট করছিলেন। পরদিন ভোরে শাহানা বেগমকে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই দিন বেলা ১১টার দিকে তিনি মারা যান। এর পর থেকে ছোট তিন সন্তানকে নিয়ে কূলকিনারা পাচ্ছেন রফিকুল।
যোগাযোগ করলে রফিকুলকে ওষুধ কিনে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ইন্দুরকানি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম মতিউর রহমান। ইন্দুরকানি প্রেসক্লাবের সদস্য ও গাবগাছিয়া গ্রামের বাসিন্দা গাজী মো. আবুল কালাম বলেন, রফিকুল ইসলাম দরিদ্র মানুষ। তাঁর বসতঘর ছাড়া কোনো সম্পদ নেই। রফিকুল অসুস্থ হয়ে কর্মহীন হয়ে পড়লে তাঁর স্ত্রী শাহানা বেগম সংসারের দায়িত্ব নেন। শাহানার মৃত্যুর পর তিন সন্তান নিয়ে রফিকুল অসহায় হয়ে পড়েছেন। প্রতিবেশীদের দেওয়া খাবার খেয়ে কোনোমতে দিন পার করছেন।
স্ত্রীর মৃত্যুর পর ছোট ছেলে মাহামুদউল্লাহ শুধু কান্না করে। দুগ্ধপোষ্য শিশুটি সারাক্ষণ মাকে খোঁজে। ছেলেকে দুধ কিনে খাওয়ানোর টাকা নেই। তাই বাধ্য হয়ে তরকারি দিয়ে ভাত ও মুড়ি পানিতে ভিজিয়ে খাওয়াচ্ছেন।
গত সোমবার দুপুরে বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, রফিকুল ঘরে শুয়ে আছেন। তাঁর তিন সন্তান প্রতিবেশীর ঘরের পাশে একটি মাদুরে বসা। রফিকুলের দুই মেয়ে বিলকিস ও সুমাইয়া তাদের ছোট ভাই মাহমুদউল্লাহকে সামলাচ্ছে। বিলকিস ও সুমাইয়া জানায়, তারা সকালে পান্তাভাত লবণ-মরিচ দিয়ে খেয়েছে। দুপুরে ঘরে রান্না হয়নি। কেউ খাবার দিলে খাবে, তা না হলে না খেয়ে থাকতে হবে।
সেখানে আলাপকালে রফিকুল ইসলাম বলেন, স্ত্রীর মৃত্যুর পর ছোট ছেলে মাহামুদউল্লাহ শুধু কান্না করে। দুগ্ধপোষ্য শিশুটি সারাক্ষণ মাকে খোঁজে। ছেলেকে দুধ কিনে খাওয়ানোর টাকা নেই। তাই বাধ্য হয়ে তরকারি দিয়ে ভাত ও মুড়ি পানিতে ভিজিয়ে খাওয়াচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, স্ত্রী মারা যাওয়ার পর প্রতিবেশীদের দেওয়া খাবার খেয়ে বেঁচে আছেন। আর কত দিন তাঁরা খাবার দেবেন। তাঁর ঘরে কোনো খাবার নেই। নিজের চিকিৎসা ও সন্তান লালন-পালন নিয়ে ভীষণ চিন্তায় আছেন।