সাবেক প্রতিমন্ত্রী তাজুল ইসলামের ভাগনে জাদিদ আট দিনের রিমান্ডে
সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলামের ভাগনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা কাজী জাদিদ আল রহমানকে ২১ মাস আগে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে করা এক মামলায় রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চতুর্থ আদালতের বিচারক সাদেকুর রহমান তাঁর আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন থেকে জাদিদকে আটক করে পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পরিদর্শক কাজী দিদারুল আলম। কাজী জাদিদ আল রহমান উপজেলার উজানচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলামের ভাগনে। এর আগে বুধবার একই মামলায় তাজুল ইসলামকেও ৯ দিনের রিমান্ডে পাঠান একই আদালত। ২০০৯ সালের শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রিসভার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তাজুল। তিনি ২০০৮ সাল থেকে টানা চার মেয়াদে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।
পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৯ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে মিছিল বের করাকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষ চলাকালে উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি রফিকুল পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। ওই দিন সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান।
ওই ঘটনায় ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর বাঞ্ছারামপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আফজাল হোসেন বাদী হয়ে ৩০২ ধারাসহ (হত্যা) বিভিন্ন ধারায় বিএনপির ১৭ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১২০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ওই মামলার এজাহারে তাজুল ইসলাম ও তাঁর ভাগনে কাজী জাদিদের নাম নেই।
এ বিষয়ে জেলা ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রদল নেতা নিহত হওয়ার ঘটনায় ইন্ধনদাতা হিসেবে তাজুল ইসলাম ও তাঁর ভাগনে কাজী জাদিদ আল রহমানের জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। এ কারণে অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে তাজুল ইসলামের পর তাঁর ভাগনেকেও মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
ওসি সহিদুল ইসলাম বলেন, ওই মামলায় জেলা গোয়েন্দা শাখার এসআই সোহেল আহমেদ ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আদালতে আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। এর আগে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে পুলিশ কর্মকর্তারা কাজী জাদিদকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়ে আসেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেকুল ইসলাম খান, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সমিতির সহসভাপতি গোলাম সারওয়ার ও জেলা যুবদলের সহসভাপতি আবদুর রহিম জানান, ছাত্রদল নেতা রফিকুল হত্যা মামলায় মামা তাজুল ইসলামের পাশাপাশি তাঁর ভাগনে কাজী জাদিদের ইন্ধন রয়েছে। সে সময় থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ গ্রহণ করেনি। আদালতে পুলিশসহ ৬০ জনের বেশি আসামি করে মামলা দিলেও তা খারিজ হয়ে যায়। পুলিশের করা ওই মামলায় ছাত্রদল নেতাকে হত্যায় ইন্ধনের অভিযোগে কাজী জাদিদের আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।