ঈদে সড়কে ঘরমুখী মানুষের চাপ, গাজীপুরে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ
মাত্র দুই দিন পর পবিত্র ঈদুল আজহা। পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করতে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন শিল্পনগরী গাজীপুর ও ঢাকার কর্মজীবী মানুষ। ঢাকা–টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহন ও ঘরমুখী মানুষের চাপ বেড়েছে কয়েক গুণ। বাসের চেয়ে মানুষের ভিড়ই যেন বেশি। এ সুযোগে গণপরিবহনের অসাধু কিছু চালক ও সহযোগী অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন।
আজ শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টি হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন ঘরমুখী যাত্রীরা। দুপুরের পর ঢাকা–টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীবাহী বাসগুলোয় চলছে দরদাম। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে তুলনায় বাসগুলোতে দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। এতে হতাশা প্রকাশ করছেন যাত্রীরা। তবে পরিবহন চালকদের দাবি, সড়কের বিভিন্ন স্থানে খরচ বেড়েছে। এ জন্য ঈদে বেশি ভাড়া নেওয়া হয়।
হাবিবুর রহমান নামের এক যাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে সিরাজগঞ্জে যেতে ভাড়া লাগে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। কিন্তু আজ ৬০০ টাকা করে চাচ্ছে। ৫০০ টাকা বলেছি, তা–ও নিচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত ৫৫০ টাকা করে দিয়ে আমরা তিনজন বাসে উঠছি।’
পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে রাজশাহীতে যাচ্ছেন সাখাওয়াত হোসেন নামের পোশাক কারখানার এক শ্রমিক। তিনি বলেন, ‘স্ত্রী–ছেলেমেয়েসহ চারজনের ভাড়া চাইতেছে ৩ হাজার ২০০ টাকা। অথচ স্বাভাবিক সময়ে এই ভাড়া ১ হাজার ৬০০। ঈদের বোনাস যা পাইছিলাম, তা তো ভাড়াতেই চলে যাচ্ছে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ এলাকার সেলিম রেজা আশুলিয়া এলাকার একটি পোশাক তৈরি কারখানায় চাকরি করেন। তিনি বলেন, ‘বছরের অন্য সময় লোকাল বাসে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা ভাড়া নেয়। সেই বাস এখন সর্বনিম্ন ভাড়া নিচ্ছে ১ হাজার টাকা। আমি রাজশাহী পর্যন্ত লোকাল বাসে ৮০০ টাকা দরদাম করে উঠেছি।’
শ্যামলী পরিবহনের চন্দ্রা এলাকার কাউন্টারের ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম বলেন, ভাড়া নৈরাজ্য সৃষ্টি করছেন নন–ব্র্যান্ডের কিছু বাস ও লোকাল বাসের মালিকেরা। যাঁদের কোনো কাউন্টার নেই। ঈদ কেন্দ্র করে তাঁরা দূরপাল্লার যাত্রী বহন করেন।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বাড়তি ভাড়ার চাপ ও যানবাহন স্বল্পতায় ঘরমুখী অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পিকাপ ভ্যান, খোলা ছাদের ট্রাক ও বাসের ছাদে ভ্রমণ করছেন।
নওগাঁর ফিরোজ হোসেন একটি ট্রাকে উঠে বসেছেন। জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, ‘বাসে যে ভাড়া চাচ্ছে, তা দিলে আমার আর বাড়ি যাওয়া হবে না। তাই বাধ্য হয়ে ট্রাকে উঠেছি।’ বৃষ্টি হলে কী করবেন জানতে চাইলে বলেন, ‘ট্রাকে পলিথিন আছে, সেটা মাথার ওপরে দিয়ে চলে যাব। আর ভিজলেও সমস্যা নেই।’
ঘরমুখী মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে এবং মহাসড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় গাজীপুর জেলা, হাইওয়ে ও মহানগর পুলিশ একযোগে কাজ করছে। নাওজোড় হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মহাসড়কে পুলিশ সদস্যরা সবাই যানজট নিরসনে ব্যস্ত। এ সুযোগে কিছু অসাধু ব্যক্তি অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে থাকতে পারেন। তাঁদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থানীয় কাউন্টারগুলোকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করার ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া আছে।