১৪ বছর আগে নিখোঁজ তরুণের দেহাবশেষ খুঁজতে পুকুরপাড়ে পুলিশের খোঁড়াখুঁড়ি

নিখোঁজ ব্যক্তির দেহাবশেষ খুঁজে পেতে পুলিশের তল্লাশি। সোমবার ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উমানাথপুর গ্রামেছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার নুরুজ্জামান (২৮) ২০১০ সালে নিখোঁজ হন। পাশের উপজেলা ঈশ্বরগঞ্জে বড় ভাইয়ের শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার পর তাঁর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ঈশ্বরগঞ্জ ও নান্দাইল মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়েছিল। সম্প্রতি নুরুজ্জামানের বড় ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ির এক সদস্য পুলিশের কাছে গিয়ে জানায়, তাঁদের বাড়িতেই নুরুজ্জামানকে হত্যা করা হয়েছে।

এই বয়ানের ভিত্তিতে ঈশ্বরগঞ্জ থানা-পুলিশের একটি দল নিখোঁজ ব্যক্তির লাশের অংশ খুঁজে পেতে তল্লাশি শুরু করেছে। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের উমানাথপুর গ্রামের এক পুকুরপাড়ে খননযন্ত্র দিয়ে মাটি খুঁড়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।

নিহত নুরুজ্জামান মবেতাগৈর ইউনিয়নের বেতাগৈর গ্রামের বাসিন্দা। সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে উমানাথপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, লোকে লোকারণ্য। কয়েক পুলিশ সদস্য সেখানে চেয়ার পেতে বসে আছেন। পুকুরপাড়ে বড়সড় গর্ত করে মাটি খুঁড়ে রাখা হয়েছে। থকথকে কাদাপথ মাড়িয়ে উৎসুক কয়েক শ গ্রামবাসী পুলিশের এ কার্যক্রম দেখতে এসেছে।

উমানাথপুর গ্রামের কয়েক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ গ্রামের ইসলাম উদ্দিন সরকার ঈশ্বরগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ে দলিল লেখালেখি করেন। তাঁর ছেলে মো. শরীফুল সরকার একসময় বাবার সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। শরীফুল ক্যানসারে আক্রান্ত। সম্প্রতি শরীফুল জেলার গৌরীপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) সুমন মিয়াকে গিয়ে জানান, ২০১০ সালে নিখোঁজ নুরুজ্জামানকে তাঁদের বাড়িতে হত্যা করা হয়েছে। কারা কারা তাঁকে হত্যা করেছেন এবং হত্যার পর লাশ কোথায় পুঁতে রাখা হয়েছে, সে সম্পর্কে তথ্য দেন তিনি।

শরীফুলের সেই বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ সংগ্রহ করে দেখা যায়, ‘আমার জীবনের শেষ সময় এসে গেছে। আমি আর বেশি দিন বাঁচব না। মৃত্যুর আগে সত্য প্রকাশ করে যেতে চাই।’ এ কথা বলার পর নুরুজ্জামানকে তাঁর পরিবারের কোন কোন সদস্যরা মিলে হত্যা করেছেন, একে একে তাঁদের নাম প্রকাশ করেন। তাঁকে হত্যার পর লাশ কোথায় পুঁতে রাখা হয়েছে, সেই স্থানের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

শরীফুলের দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে পুলিশি পাহারায় নির্ধারিত স্থানটি (পুকুরপাড়) দুই দিন ধরে খনন করা হচ্ছে। তবে সোমবার বিকেল চারটা পর্যন্ত খনন করা জায়গায় মানুষের দেহাবশেষ পাওয়া যায়নি।

গ্রামের কয়েক বাসিন্দা বলেন, নুরুজ্জামান নিখোঁজের ১৪ বছর পর শরীফুল সরকার যেসব তথ্য প্রকাশ করেছেন, তা রক্ত হিম করা। গ্রামের বাসিন্দারা নুরুজ্জামানের ভাগ্যে আসলে কী ঘটেছিল, সে সম্পর্কে জানার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় আছেন।

পুকুরপাড়ে খোঁড়াখুঁড়ির সময় পুলিশের সঙ্গে শরীফুলের বাবা ইসলাম উদ্দিন সরকার ছিলেন। তিনি বলেন, তাঁর ছেলে শরীফুল এখন চিকিৎসা নিতে ময়মনসিংহে গেছেন। তিনি বুঝতে পারছেন না শরীফুল কেন এসব কথা বললেন। এসব কথার কোনো সত্যতা নেই।

নিখোঁজ ব্যক্তির বড় ভাই মো. আক্তারুজ্জামান জানান, তাঁর আরেক ভাই মো. আনিসুজ্জামান ইসলাম উদ্দিন সরকারের ভাইয়ের মেয়েকে বিয়ে করেছেন। সে হিসেবে শরীফুল তাঁদের আত্মীয়। ২০১০ সালে শরীফুল তাঁর ভাইকে (নুরুজ্জামান) ডেকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন। এর পর থেকে নুরুজ্জামান নিখোঁজ হন। তাঁকে আর পাওয়া যায়নি।

আক্তারুজ্জামান আরও বলেন, ভাইয়ের খোঁজে পরিবারের সদস্যরা দেশের নানা প্রান্তে ছুটে গেছেন। তিনি নিজেও চট্টগ্রাম, বরিশালসহ কয়েকটি স্থানে গেছেন। কিন্তু ভাইয়ের সন্ধান পাননি। এখন শরীফুল যেসব তথ্য প্রকাশ করেছেন, তা তাঁদের পরিবারের সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।

ময়মনসিংহের গৌরীপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) সুমন মিয়া বলেন, যদি দেহাবশেষ পাওয়া যায়, তাহলে জানানো হবে।