বরিশালে পুড়ে যাওয়া বাড়ির সামনে থেকে ঘুরে গেলেন হাসানাতপুত্র মঈন আবদুল্লাহ
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আকস্মিক বরিশালে ঘুরে গেলেন সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর মেজ ছেলে মঈন আবদুল্লাহ। গতকাল মঙ্গলবার তিনি বরিশাল নগরের কাউনিয়া এলাকায় নানাবাড়িতে যাওয়ার পাশাপাশি নগরের কালীবাড়ি সড়কের পৈতৃক বাড়িতেও যান। তবে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেননি তিনি।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর ভাই মঈন আবদুল্লাহ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক পদে আছেন। জেলা আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, গত ১৫ বছরে বরিশালের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না মঈন। এমনকি বরিশাল নগর ও জেলা আওয়ামী লীগে তাঁর কোনো পদ নেই। তাঁর বাবা বরিশাল-১ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই।
স্থানীয় বাসিন্দা ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে মঈন আবদুল্লাহ একটি কালো রঙের গাড়িতে নগরের কাউনিয়া এলাকায় তাঁর নানাবাড়িতে আসেন। গাড়িটি তিনি নিজেই চালাচ্ছিলেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের ছেলে মুয়াজ আরিফ। গাড়ি বহরে ছিল আরও দুটি সাদা রঙের প্রাইভেট কার ও তিনটি মোটরসাইকেল। নানাবাড়িতে দুপুরের খাবার খেয়ে নগরের কালীবাড়ি সড়কে পৈতৃক বাড়িতে আসেন মঈন আবদুল্লাহ।
এই বাড়িতে ৫ আগস্ট বিকেলে বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দেন। এতে বাড়ির বেশির ভাগ অংশ পুড়ে যায়। বাড়ির দ্বিতীয় তলার কক্ষ থেকে ওই দিন রাতে তিনজনের পোড়া লাশ উদ্ধার হয়। তাঁদের মধ্যে নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সিটি কাউন্সিলর গাজী নঈমুল হোসেন ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি জানান, গতকাল দুপুরে মঈন আবদুল্লাহ পৈতৃক বাড়ির সামনে এসে কিছুক্ষণ অবস্থান করেন। পরে নগরের কবরস্থান রোডে তাঁর মা বেগম শাহানারা আবদুল্লাহ ও আগুনে পুড়ে নিহত কাউন্সির নঈমুল হোসেনের কবর জিয়ারত করেন। পরে তিনি ঢাকায় ফিরে যান।
বরিশাল নগর আওয়ামী লীগের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, মঈন আবদুল্লাহ আকস্মিকভাবে বরিশালে আসেন কাউকে কিছু না জানিয়ে। তা ছাড়া বরিশালে দলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাই এখন বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছেন। পরে জানতে পেয়েছেন মঈন আবদুল্লাহ বরিশালে এসেছিলেন।
বরিশালে আসার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মঈন আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বরিশাল আমার জন্মস্থান। সেখানে আমি যাব, এটাই তো স্বাভাবিক। আমি তো রাজনীতি করি না। আমি একজন ব্যবসায়ী, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ও সিআইপি।’
তাঁর সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টার ছেলে থাকার বিষয়ে মঈন আবদুল্লাহ বলেন, ‘তিনি আমার ছোটবেলার বন্ধু। সেই বাল্যকাল থেকে আমরা একসঙ্গে বড় হয়েছি।’ পৈতৃক বাড়ির ভেতরে না যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে ছাড়া ওই বাড়িতে আমি কী করে যাই? তা ছাড়া পত্রপত্রিকায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া আমার বাড়ির যেসব ছবি দেখেছি, তাতে সেখানে গেলে হয়তো নিজেকে সামলাতে পারব না।’
মঈন আবদুল্লাহ বলেন, ‘ওই বাড়ির সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। স্বাধীনতা–পরবর্তী সময়ে অনেকবার রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু আমার দাদা শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাতের গড়া ওই বাড়িতে কোনো দিন একটা ঢিলও পড়েনি। যত দূর জানি, আমার পরিবারের কেউ কখনো এভাবে কারও বাড়ি পোড়ায়নি। আমি বাবার সন্তান হিসেবে গর্ব বোধ করি। ওই বাড়িতে যখন যাব, তখন বাবার সঙ্গেই যাব।’
প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে নেই। এর মধ্যে মঈন আবদুল্লাহর বরিশালে আসার খবরটি আজ জানাজানি হলে এ নিয়ে নানা আলোচনা চলছে।
এ বিষয়ে বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, এটা তাঁর জন্মস্থান, সেখানে তিনি আসতেই পারেন। তবে এই সময়ে আসাটা সঠিক হয়নি। কারণ, বিষয়টি জানাজানি হলে যদি আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা তাঁর ওপর হামলা চালাতেন বা গাড়ি ভাঙচুর করতেন, তাহলে সেই দায় কে নিতেন?