ভূমি জরিপে আসা ১০ সার্ভেয়ারকে অবরুদ্ধ করে রাখলেন চরবাসী

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে এলাকাবাসী ভূমি হরিপে আসা ১০ কর্মীকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদ মোড়ে
ছবি: প্রথম আলো

জমি রেকর্ডে অনিয়মের অভিযোগে এবার রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নবাসী দিয়ারা সেটেলমেন্ট ঠেকিয়ে দিল। বিআরএস রেকর্ডের জন্য জমি জরিপ করতে দিয়ারা সেটেলমেন্ট অপারেশনের ১০ কর্মীকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।

আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) মোড়ে এলাকার লোকজন তাঁদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নির্দেশে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করেন। তবে দিয়ারা সেটেলমেন্ট অপারেশনের সার্ভেয়ারদের মুচলেকা দিতে হয়েছে যে এই চরে তাঁরা আর জরিপ করতে আসবেন না।

পদ্মা নদীর ওপারে ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া এই ইউনিয়নের দুটি মৌজায় এর আগে ২০০৯ সালে বিআরএস রেকর্ডের জরিপ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তখন অনেকের জমি প্রভাবশালীদের নামে রেকর্ড হয়ে যায়। ইউনিয়নবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী ভূমিদস্যু চক্র অসাধু সার্ভেয়ারদের ঘুষ দিয়ে অন্যের অনেক জমি নিজেদের নামে করে নিয়েছেন। খতিয়ানে তাঁরা খাসজমিরও মালিক হয়ে গেছেন। কিছুদিন ধরে ওই একই চক্র ইউনিয়নের বাকি এলাকায় বিআরএস রেকর্ড করার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছিল।

সম্প্রতি দিয়াড় মানিকচক ও আষাড়িয়াদহ মৌজায় দিয়ারা সেটেলমেন্টের জন্য নোটিশ জারি করা হয়। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফার ছেলে গোলাম মোর্শেদ ওরফে তোতা এলাকার মসজিদে গিয়ে বিআরএস রেকর্ডের চিঠি দিয়ে আসেন মুসল্লিদের পড়ে শোনানোর জন্য। দিয়ারা সেটেলমেন্ট অপারেশন, রাজশাহীর চার্জ অফিসারের ওই জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১০ ডিসেম্বর থেকে বিআরএস রেকর্ডের জন্য দিয়ারা জরিপ শুরু হবে।

এতে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন চরবাসী। এই জরিপ না করার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেন। তাতে সাড়া না পাওয়া গেলে ১০ ডিসেম্বর সকাল থেকে তাঁরা ইউনিয়ন পরিষদ মোড়ে অবস্থান নেন। ফলে সেদিন কেউ জরিপ করতে যাননি। হঠাৎ আজ জরিপের জন্য দিয়ারা অপারেশনের সার্ভেয়ার-কর্মচারী মিলিয়ে ১০ জন যান চরে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন চরবাসী। সার্ভেয়ার-কর্মচারীদের ইউনিয়ন পরিষদ মোড়ে আটকে রাখেন কয়েক শ মানুষ। খবর পেয়ে ছুটে যান ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলামও। তখন স্থানীয় রোকজন চেয়ারম্যানের ওপর চড়াও হন। তাঁরা বলেন, ‘ঘুষ-দুর্নীতির ফাঁদ’ এই জরিপ বন্ধ করতে না পারলে চেয়ারম্যানকেই পদত্যাগ করতে হবে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ইউপি চেয়ারম্যান ইউএনওকে ফোন করেন।

ইউএনও আবুল হায়াত বলেন, চরের মানুষ আগের ‘ম্যানুয়াল জরিপে’ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ জন্য তাঁরা জরিপের ব্যাপারে ক্ষুব্ধ ছিলেন। এটা তাঁর জানা ছিল না। দিয়ারা সেটেলমেন্ট থেকে জানানো হয়, তারা জরিপ করতে যাবে। তিনি সেটা চেয়ারম্যানকে জানিয়েছেন। ওখানে গিয়ে যে তাঁদের গোটা চরের মানুষ আটকে দিতে পারেন, এটা কেউ তাঁকে বলেননি। পরে জানতে পারেন, হাজারখানেক মানুষ তাঁদের ঘিরে রেখেছেন। এবার যে ডিজিটাল জরিপ হবে, এটা কেউ চারবাসীকে বোঝাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, চরে জরিপ বন্ধ। তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে সার্ভেয়ার-কর্মচারীদের উদ্ধার করার ব্যবস্থা করেন।