ছুটি শেষে ঢাকায় গিয়ে গুলিতে নিহত হন আবদুল গণি

আন্দোলনে যোগ দিয়ে ঢাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত সোনাগাজী উপজেলার বীমা কর্মকর্তা আবদুল গণি বোরহানছবি-সংগৃহীত

ছুটি শেষ করে ১০ দিন পর বাড়ি থেকে কর্মস্থলে গিয়েছিলেন বিমা কর্মকর্তা আবদুল গণি বোরহান (২৫)। তিন দিন পর আবার যখন বাড়ি ফিরলেন, তখন কান্নায় ভেঙে পড়ল পুরো এলাকা। গত রোববার অফিসের কাজ শেষে ছাত্র-জনতার সঙ্গে রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় মিছিলে যোগ দেন। সেখানে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীদের গুলিতে নিহত হন বোরহান।

মাত্র ১০ মাস আগে বিয়ে করেছেন আবদুল গণি বোরহান। লাশ বাড়িতে প্রবেশ করানোর সঙ্গে সঙ্গে নববিবাহিত স্ত্রীসহ আত্মীয়স্বজনদের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে। উপজেলার সদর ইউনিয়নের ছাড়াইতকান্দি এলাকার আহসান উল্যাহর ছেলে আবদুল গণি বোরহান চার ভাই এক বোনের মধ্যে ছিলেন তৃতীয়। তিনি সন্ধানী লাইফ ইনস্যুরেন্সের ঢাকার বাংলামোটর শাখার আইটি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

বোরহানের বড় ভাই আমানত উল্যাহ বলেন, গত শনিবার আন্দোলনের মধ্যেই অফিসের কাজে ঢাকায় চলে যান তিনি। রোববার অফিসের কাজ শেষ করে বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেন। এ সময় মিছিল চলাকালে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন বোরহান। উপস্থিত লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে ময়নাতদন্ত শেষে গত সোমবার সন্ধ্যায় তাঁর মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। রাত নয়টায় সোনাগাজী মোহাম্মদ ছাবের সরকারি মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে প্রথম নামাজে জানাজা এবং উপজেলার মনগাজী বাজারে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাঁর লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

বোরহানের স্বজনরা জানান, ১০ মাস আগে সোনাগাজী চর চান্দিয়া ইউনিয়নের পূর্ব বড়ধলী গ্রামের বাসিন্দা আয়েশা আক্তারের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন বোরহান। তিনি ছোটবেলা থেকে মেধাবী ছাত্র ছিলেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করে বিমা কোম্পানিতে আইটি কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন।

বোরহানের স্ত্রী আয়েশা আক্তারের বরাত দিয়ে এক আত্মীয় বলেন, ছুটি শেষে ঢাকায় ফেরার পর স্বামী-স্ত্রী দুজনের মধ্যে একাধিকবার কথা হয়েছে। ৪ আগস্ট দুপুরেও তিনি ফোন করে বাড়ির সবার খোঁজখবর নিয়েছেন। অফিস শেষ করে বের হওয়ার আগেও একবার কথা হয়। তখন বলেছিলেন ঢাকায় খুব গন্ডগোল হচ্ছে। বাসায় গিয়ে ফোন দিয়ে কথা বলবেন। কিন্তু সেই না–বলা কথা আর বলা হয়নি। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যান তিনি। স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে সবার কাছে স্বামীর জন্য দোয়া চান।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে ঢাকায় সোনাগাজী বিমা কর্মকর্তা বোরহান ছাড়াও ফেনীতে মো. সাকিব (২১) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। সাকিব উপজেলার মান্দারী এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে।